ওয়াশিংটন ডিসিতে (Washington, D.C.) গৃহহীনদের উচ্ছেদ করতে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পদক্ষেপ বর্তমানে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আগস্ট মাসের শুরুতে শহরটিতে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়ানোর পর থেকেই বাস্তুহারা মানুষেরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, আশ্রয়কেন্দ্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি, যার ফলে তারা হয়রানির ভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
ডিসির রাস্তায় প্রায় আট বছর ধরে বসবাস করা জেফ প্যাগেট (Jeff Padgett) নামের এক ব্যক্তি এখন প্রতিদিন রাতে পোটোম্যাক নদী পার হয়ে ভার্জিনিয়ার জঙ্গলে আশ্রয় নেন। তার সাথে আছে দুটি ছোট কুকুর, যাদের নিয়ে তিনি সবসময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যান।
প্যাগেটের ভাষায়, কর্তৃপক্ষের ‘হয়রানি, আটক বা আলটিমেটাম’ এড়াতে তিনি ডিসিতে রাতে থাকছেন না।
হোয়াইট হাউসের দাবি, অভিযান শুরুর পর থেকে ৫০টির বেশি গৃহহীনদের আশ্রয়স্থল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে আশ্রয় বা পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাহায্যকর্মীরা বলছেন, বাস্তুহারাদের শুধু এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে, তাদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেককে তাদের জিনিসপত্রও ফেলে যেতে হয়েছে।
বাস্তুহারা মানুষজন এখন কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। তারা দিনের বেলা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকছেন এবং রাতে বাসের আনাগোনা করে সামান্য ঘুমের চেষ্টা করছেন।
অনেকে আবার তাঁবু খাটাচ্ছেন না, ফুটপাতেও থাকছেন না, বরং জঙ্গলে লুকিয়ে থাকছেন।
গৃহহীনদের এই দুর্দশার কারণে সাহায্যকর্মীরা উদ্বিগ্ন। ‘মিরিয়াম’স কিচেন’-এর নীতি পরিচালক অ্যান্ডি ওয়াসেনিচ (Andy Wassenich) বলেন, “এখানে একটা ভীতি, উদ্বেগ এবং রাগ কাজ করছে।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এতে তাদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে, কারণ তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।”
জর্জটাউন মিনিস্ট্রি সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ক্লিয়ার উইলসন (Claire Wilson) জানান, তাদের কেন্দ্রে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। “আমরা মনে করি, এটা নিছক রাজনৈতিক চাল।
কিন্তু এর বাইরে আর কিছু বলার উপায় নেই, কারণ উচ্ছেদের বাইরে তারা আর কিছুই করেনি,” যোগ করেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহহীনদের তাৎক্ষণিকভাবে এলাকা ছাড়তে এবং তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে, আশ্রয়কেন্দ্র বা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
এমনকি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জরিমানা বা কারাবাসের মতো শাস্তির কথাও বলা হয়েছিল।
মেয়র মুরিয়েল বাউজার (Muriel Bowser) অবশ্য ফেডারেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার প্রশাসন এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং বাস্তুহারাদের জন্য বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করছে।
বাস্তুহারাদের সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো তাদের ক্লায়েন্টদের সব সময় দলবদ্ধ থাকতে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো প্রকার বিতর্কে না জড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের মতে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অনেক ক্ষেত্রে বসবাসের উপযুক্ত নয়, যেখানে আগে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আশ্রয়হীন জীবনযাপন করা ৬২ বছর বয়সী গ্যারি মার্সার (Gary Mercer) বলেন, “বুদ্ধিমান হলে এখান থেকে সরে যেতে হবে।”
আর্লিংটন কাউন্টির মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভার্জিনিয়ার এই অংশে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়াসেনিচ আরো জানান, তারা তাদের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফ্লিপ ফোন সরবরাহ করছেন। তবে কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে এরই মধ্যে প্রায় ২৫ জন মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
ওয়াসেনিচ আরও বলেন, অনেক আমেরিকান সামান্য আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েই গৃহহীন হয়ে পড়েন। তাই সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন