আদিবাসী শিশুদের উপর ট্রাম্পের নৃশংসতা, গবেষণা বন্ধ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী শিশুদের বোর্ডিং স্কুলের ইতিহাস অনুসন্ধানে বরাদ্দকৃত তহবিল কাটছাঁট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং তাদের শিশুদের উপর হওয়া অত্যাচারের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এই পদক্ষেপে অন্তত ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সরকারি অনুদান বাতিল করা হয়েছে।

আদিবাসী শিশুদের বোর্ডিং স্কুলগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্ধকার অধ্যায়। একসময় সরকার আদিবাসী শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে বোর্ডিং স্কুলগুলোতে পাঠাতো। উদ্দেশ্য ছিল, তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে আমেরিকান সংস্কৃতিতে মিশিয়ে দেওয়া।

এসব স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো, যা তাদের জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

আদিবাসী বোর্ডিং স্কুলে শিশুদের উপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল, পুরনো নথিপত্র সংগ্রহ ও ডিজিটাল করার কাজ। এই কাজটি করছিলেন ‘ন্যাশনাল নেটিভ আমেরিকান বোর্ডিং স্কুল হিলিং কোয়ালিশন’ নামের একটি সংস্থা।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের প্রায় ২ লক্ষ ৮২ হাজার ডলারের বেশি অনুদান বাতিল করা হয়েছে। ফলে, ১ লক্ষেরও বেশি পৃষ্ঠার বোর্ডিং স্কুলের নথি ডিজিটাল করার কাজ এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ঘটনার শিকার একজন রবার্টা “বার্ডি” স্যাম। তিনি জানান, এই ডেটাবেজের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন, তার ঠাকুরমা আলাস্কার একটি বোর্ডিং স্কুলে ছিলেন। এছাড়াও, তার আরও এক ডজন চাচাতো ভাই-বোন, কাকা-মাসি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ওরেগনের একটি বোর্ডিং স্কুলে ছিলেন।

তাদের মধ্যে একজন সেখানে মারাও গিয়েছিলেন। বার্ডি বলেন, এই তথ্যগুলো তাকে মানসিক শান্তি দিয়েছে এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করেছে।

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করা অন্যান্য সংগঠনও এই সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। কোয়াহনিক ব্রডকাস্ট কর্পোরেশন এবং আলাস্কা নেটিভ হেরিটেজ সেন্টার-এর মতো সংস্থাগুলো আদিবাসী প্রবীণদের মৌখিক ইতিহাস রেকর্ড করার জন্য অনুদান হারিয়েছে।

আলাস্কা নেটিভ হেরিটেজ সেন্টারের পরিচালক বেঞ্জামিন জাকুক জানান, তারা একটি বোর্ডিং স্কুল বিষয়ক প্রদর্শনী করার জন্য পাওয়া প্রায় ১ লক্ষ ডলারের অনুদানও হারিয়েছেন।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতারা এই পদক্ষেপকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের গবেষণা প্রকল্পগুলো আদিবাসী শিশুদের উপর হওয়া অত্যাচারের ইতিহাসকে সামনে আনতে এবং তাদের ক্ষত সারাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সাবেক সহকারী সেক্রেটারি অফ ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স ব্রায়ান নিউল্যান্ড বলেন, ফেডারেল বাজেটের তুলনায় এই অনুদানের পরিমাণ খুবই সামান্য ছিল। তাই, সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের যুক্তিতে এই কাটছাঁট করাটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ইতিহাস রক্ষার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, তাদের অতীত জানা এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *