ইস্পাত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি ধাক্কা মিডলটাউনে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত খাতে ভর্তুকি বন্ধের পরিকল্পনা, বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাবের আশঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিল্পখাতে অর্থায়ন বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এর ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সের শহর ওহাইও’র মিডেলটাউনে অবস্থিত ক্লীভল্যান্ড-ক্লিফস নামক একটি ইস্পাত কারখানায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসন এই কারখানার পুরনো চুল্লি আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। এছাড়াও, পেনসিলভানিয়া রাজ্যের অনুরূপ একটি প্রকল্পের জন্য কোম্পানিটিকে আরও ৭৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল।

নতুন এই চুল্লিগুলো কয়লার পরিবর্তে পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং বিদ্যুতের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। এর ফলে কারখানার আয়ু বাড়তো এবং ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হতো।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ কিছু নথি সূত্রে জানা যায়, এই তহবিলগুলো বাতিল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শুধু মিডেলটাউনেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১,২০০ নির্মাণ শ্রমিক এবং ১০০ জনের বেশি স্থায়ী চাকরির সুযোগ তৈরি হতো।

সরকারের কর্মদক্ষতা বিভাগের প্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন এলন মাস্ক, যিনি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের বাজেট কমানোর জন্য কাজ করছেন।

এই বিষয়ে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান মার্সি ক্যাপচার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সরকারের চুক্তি থেকে বিশাল সম্পদ তৈরি করা একজন ব্যক্তি একতরফাভাবে এই প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করতে পারেন না।

অন্যদিকে, জ্বালানি বিভাগের মুখপাত্র বেন ডিটরিখ জানিয়েছেন, তহবিল কমানো হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন থেকে অনুমোদন পাওয়া বিলিয়ন ডলারের অনুদান কর্মসূচিগুলো বর্তমানে পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং এর কতটুকু কমানো যায়, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে, তখন এমন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ।

যদিও ট্রাম্পের শুল্ক নীতি উৎপাদনের জন্য সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, তবে বাজারের অস্থিরতা, মন্দা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তবে, কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি সেঞ্চুরি অ্যালুমিনিয়ামকে নতুন ও আরও কার্যকর একটি স্মেল্টার (ধাতু নিষ্কাশন কেন্দ্র) তৈরির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেওয়া।

উল্লেখ, এটি কয়েক দশকের মধ্যে নির্মিত হওয়া প্রথম নতুন স্মেল্টার।

ওহাইওর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন বন্ধ করার বিষয়টি অনেক স্টেকহোল্ডারকে হতাশ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, ভাইস প্রেসিডেন্টের শহরে অবস্থিত একটি বৃহৎ কোম্পানির জন্য ফেডারেল অনুদান বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেই।

সূত্রটি আরও জানায়, “রাজনৈতিকভাবেও এর কোনো মানে হয় না।

ক্লিভল্যান্ড-ক্লিফসের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শন কফি এই অনুদানকে “বিরাট” উল্লেখ করে বলেন, “পরিবেশবান্ধব উপায়ে কারখানার আধুনিকীকরণ কর্মীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।

যদি এই অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়া হবে কিনা, তা কোম্পানির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। কফি আরও জানান, “যদি তারা প্রকল্পটি বাতিল করে, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে আমরা ১৭০টি চাকরি হারাব।

অন্যদিকে, ক্লিন এনার্জি ডেমনস্ট্রেশন অফিসের একজন প্রাক্তন কর্মচারী জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাইডেন প্রশাসনের সময় নেওয়া অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশেষ করে, যেসব প্রকল্পে নির্মাণ পরিকল্পনার জন্য সামান্য কিছু অর্থ দেওয়া হয়েছিল, সেইগুলোর বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে।

এই বিষয়ে ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের সাবেক উপ-পরিচালক সামিরা ফাজিলি জানান, বাইডেন প্রশাসন এই অনুদানগুলোকে আধুনিকায়নের একটি উপায় হিসেবে দেখেছিল।

এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং উৎপাদন খাত আরও উন্নত হবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই ক্ষেত্রে “কাটছাঁট” নীতি গ্রহণ করেছে।

যদি এই অনুদান প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং সিমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *