যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন কিছু বাণিজ্য সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী ১লা আগস্টের মধ্যে ট্রাম্পকে বেশ কিছু শুল্ক (tariffs) সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
এই সিদ্ধান্তগুলো একদিকে যেমন মার্কিন অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, তেমনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি করতে পারে নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ।
প্রথমত, ট্রাম্প সম্ভবত বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের হার বাড়ানোর কথা ভাবছেন। বর্তমানে এই শুল্কের হার ১০ শতাংশ, যা তিনি ১৫ শতাংশ বা তার বেশি করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
যদি এমনটা হয়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর। কারণ, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে বিদেশি পণ্যগুলোর খরচ বাড়বে, যা আমদানি-নির্ভর দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের (garment industry) কথা যদি বলি, তবে এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের রপ্তানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হলো ওষুধ শিল্পের ওপর শুল্ক আরোপ করা। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে উৎপাদিত ওষুধের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানোর কথা বলছেন।
যদিও এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এমনটা হলে ওষুধের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাইরের দেশ থেকে ওষুধ আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হয়, তবে সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসতে পারে।
যদিও এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের ওপর কম হবে, তবে বিশ্ববাজারে ওষুধের দাম বাড়লে তা পরোক্ষভাবে আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
তৃতীয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো এই শুল্কগুলো সত্যিই কার্যকর করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া। অতীতে দেখা গেছে, ট্রাম্প বাণিজ্য চুক্তি এবং অভ্যন্তরীণ চাপ—উভয় কারণে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন।
এবারও তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যদি তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তবে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও দেখা দিতে পারে অস্থিরতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর ফলে, মার্কিন ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।
একইসঙ্গে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাও রয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে আরও জটিল করে তুলবে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি একটি সুযোগ এবং একইসঙ্গে একটি চ্যালেঞ্জও বটে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে গেলে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।
তবে, নতুন বাণিজ্য চুক্তি এবং বাজারের সন্ধানে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে, সরকারের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ব্যবসায়ীদের নতুন বাজারের সম্ভাবনা খুঁজে বের করার ওপর জোর দিতে হবে।
এছাড়াও, বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং শুল্কের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
মোটকথা, ট্রাম্পের এই শুল্ক বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিও মুক্ত নয়।
তাই, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন।