আতঙ্কে বিজ্ঞানীরা! গভীর সমুদ্রে খনিজ উত্তোলনে ট্রাম্পের আগ্রাসন!

গভীর সমুদ্রের তলদেশে মূল্যবান খনিজ আহরণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা চলছে, তবে এর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। একদিকে যেমন আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা মেটাতে এই খনিজগুলোর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, তেমনই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের উপর এর সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভীর সমুদ্রে খনিজ অনুসন্ধানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

কম্পিউটার চিপস এবং আধুনিক ব্যাটারির মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় তামা, কোবাল্ট, নিকেল, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ এবং অন্যান্য মূল্যবান খনিজ বর্তমানে গভীর সমুদ্রের গভীরে লুকানো রয়েছে।

এই মূল্যবান সম্পদ আহরণের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে। গভীর সমুদ্রের তলদেশে খনিজ অনুসন্ধানের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

গভীর সমুদ্র খনন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং বিতর্কিত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গভীর সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম অনাবিষ্কৃত স্থান এবং এখানে খনন কাজ পরিচালনা করলে বহু প্রজাতির ক্ষতি হতে পারে।

বর্তমানে, বিশ্বে গভীর সমুদ্র খনন বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়নি, তবে কোম্পানিগুলো এই খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

গভীর সমুদ্রে মূলত তিনটি ভিন্ন ধরনের স্থানে খনিজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রধান হলো পলিমালিক মডিউলস, যা গভীর সমুদ্রের তলদেশে ছোট পাথরের মতো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে।

এছাড়া, হাইড্রোকথার্মাল ভেন্ট এবং সিমাউন্টেও মূল্যবান খনিজ পাওয়া যায়। এই খনিজগুলি সারা বিশ্বের সমুদ্রগুলিতে বিদ্যমান, তবে বেশিরভাগ কোম্পানির মনোযোগ প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন জোনের দিকে।

এটি মেক্সিকো এবং হাওয়াই দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত এবং এর গভীরতা প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৮,০০০ ফুট।

খনন প্রক্রিয়া এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। একটি পদ্ধতিতে, বিশাল আকারের যন্ত্রগুলি সমুদ্রের তলদেশে চলাচল করে এবং মডিউলগুলি সংগ্রহ করে।

এরপর পাইপের মাধ্যমে সেগুলোকে জাহাজে নিয়ে আসা হয়, যেখানে সেগুলিকে আলাদা করা হয়। অন্য একটি পদ্ধতিতে, হাইড্রোকথার্মাল ভেন্ট এবং সিমাউন্ট থেকে খনিজ আহরণের জন্য দূর নিয়ন্ত্রিত যান ব্যবহার করা হয়।

গভীর সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গভীর সমুদ্রের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তা জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে এখনো অনেক অজানা প্রজাতি রয়েছে। এই খনন কাজের ফলে গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে, যা সামুদ্রিক জীবন এবং মৎস্য চাষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা মনে করেন, এই ধরনের খনন কাজ শুরু করা হলে তা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করবে এবং পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।

গভীর সমুদ্র খননের ফলে সৃষ্ট শব্দ এবং আলো সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

তবে, কিছু কোম্পানি মনে করে, তাদের খনন প্রক্রিয়া পরিবেশের উপর সামান্য প্রভাব ফেলবে। তারা প্রচলিত ভূমি-ভিত্তিক খনিজ আহরণের তুলনায় এই পদ্ধতির পরিবেশগত প্রভাবকে কম বলে দাবি করে।

গভীর সমুদ্র খননের বিকল্প হিসাবে পুনর্ব্যবহার, পুনঃব্যবহার এবং ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর মতো পদক্ষেপগুলি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও, কোবাল্ট এবং নিকেলের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করার জন্য নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা চলছে।

গভীর সমুদ্র খনন প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষ (International Seabed Authority) এই বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির চেষ্টা করছে।

তবে, অনেক দেশ, যেমন কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাজ্য, গভীর সমুদ্র খনন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীর সমুদ্র খননের পক্ষে জোর দেওয়া হচ্ছে এবং তারা বলছে, এর মাধ্যমে চীনের আধিপত্য কমানো সম্ভব হবে।

তবে, পরিবেশবাদীরা এর বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গভীর সমুদ্র খনন শুরু করা হলে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।

গভীর সমুদ্র খননের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। পরিবেশগত ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *