যুক্তরাষ্ট্রের গভীর সমুদ্র খনিজ সম্পদ আহরণ শিল্পের প্রসারে বিতর্কিত এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মূলত সমুদ্রের তলদেশে থাকা মূল্যবান খনিজ ও ধাতব পদার্থের উত্তোলনকে উৎসাহিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই আদেশের মূল লক্ষ্য হল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং চীনসহ অন্যান্য দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা কমানো।
**গভীর সমুদ্র খনন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপ**
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গভীর সমুদ্র থেকে খনিজ উত্তোলন দেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খনিজ সম্পদ আহরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে, ট্রাম্প প্রশাসন সমুদ্রগর্ভস্থ খনিজ সম্পদ আইন, ১৯৮০ (Deep Seabed Hard Minerals Resource Act of 1980)-এর আওতায় খনন কাজের অনুমতি দ্রুত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করা হবে।
হোয়াইট হাউজের মতে, গভীর সমুদ্র খনন থেকে আগামী এক দশকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ তৈরি হবে এবং এক লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তবে, পরিবেশবাদীরা এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের আশঙ্কা, সমুদ্রের তলদেশে এই ধরনের শিল্প কার্যক্রম সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।
গ্রিনপিসের একজন মুখপাত্রের মতে, কোনো দেশের একতরফাভাবে মানবজাতির সাধারণ ঐতিহ্য ধ্বংস করার এবং কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মুনাফার জন্য গভীর সমুদ্রকে ধ্বংস করার অধিকার নেই।
**সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান সম্পদ**
গভীর সমুদ্র খনন মূলত ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ মিটার গভীরতা থেকে আলু আকৃতির পলিমালিক নুডুলস (polymetallic nodules) উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। এই নুডুলসগুলোতে ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, কোবাল্ট, তামা এবং নিকেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।
এই উপাদানগুলো প্রতিরক্ষা, মহাকাশ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহৃত হয়। চীনসহ বিভিন্ন দেশের উপর খনিজ সম্পদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের ফলে বাণিজ্য সচিবকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় খনিজ অনুসন্ধানের লাইসেন্স এবং বাণিজ্যিক পুনরুদ্ধারের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
গভীর সমুদ্র এখনো মানুষের কাছে একটি অনাবিষ্কৃত জগৎ। চাঁদের থেকেও সমুদ্রের তলদেশ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান অনেক কম।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র তলদেশ কর্তৃপক্ষ (International Seabed Authority) গভীর সমুদ্র খনন সংক্রান্ত কিছু নিয়ম তৈরি করেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র এই সংস্থার সদস্য নয় এবং সংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেনি।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব জলসীমায় (উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত) গভীর সমুদ্র খনন করার অধিকার রয়েছে।
এই মুহূর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপ, আমেরিকান সামোয়ায় গভীর সমুদ্র খননের প্রচেষ্টা চলছে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক একটি গভীর সমুদ্র খনন কোম্পানি, ইম্পসিবল মেটালস (Impossible Metals), সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আমেরিকান সামোয়ার জলসীমায় খনিজ উত্তোলনের জন্য নিলামের অনুমতি চেয়েছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা