যুদ্ধকালীন আইনের অধীনে বিতাড়ন: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য দেশটির সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে একটি পুরনো, আঠারো শতকের ‘যুদ্ধকালীন আইন’ (Alien Enemies Act)। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, এল সালভাদরে বসবাস করা ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হোক।

আদালতের নথি অনুযায়ী, বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্টকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, ওয়াশিংটন ডিসি-র জেলা জজ জেমস বোয়াসবার্গ ১৫ই মার্চ এক আদেশে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের তাৎক্ষণিক ফেরত পাঠানো স্থগিত করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলছে, ‘ট্রেন দে আরওয়া’ নামক একটি গ্যাংয়ের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।

আবেদনটিতে বিচার বিভাগ আরও উল্লেখ করেছে, এই মামলার মূল প্রশ্ন হলো, জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কার হাতে— প্রেসিডেন্টের নাকি বিচার বিভাগের? তারা স্পষ্ট করে বলেছে, সংবিধানের সুস্পষ্ট জবাব হলো— প্রেসিডেন্ট। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শাসনামলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ‘ alien enemies act ‘ ব্যবহার করে কয়েকশ’ মানুষকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই বিতাড়ন প্রক্রিয়ার কারণ হিসেবে তিনি ‘ট্রেন দে আরওয়া’ গ্যাংকে একটি আক্রমণাত্মক শক্তি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

অন্যদিকে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union – ACLU) পাঁচজন ভেনেজুয়েলার নাগরিকের পক্ষে মামলা দায়ের করেছে। এই মামলার আইনজীবীরা বলছেন, যাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই গ্যাং সদস্যের অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে শরীরে একটি ক্রাউন ট্যাটু করেছিলেন, কিন্তু তাকে গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘Alien Enemies Act’ (বিদেশী শত্রু আইন) অনুযায়ী, কোনো অভিবাসীকে শুনানির সুযোগ না দিয়েই ফেরত পাঠানো যায়। তবে বিচারক বোয়াসবার্গ রায় দিয়েছিলেন, বিতাড়িত হতে যাওয়া অভিবাসীদের তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে। তাঁর মতে, ‘ভুলভাবে চিহ্নিত করে মানুষজনকে ফেরত পাঠানো উচিত নয়, যেখানে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই।

এই মামলাটি বর্তমানে হোয়াইট হাউস এবং ফেডারেল আদালতের মধ্যে চলমান উত্তেজনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হলো, বিচারক বোয়াসবার্গের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে খর্ব করছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *