ট্রাম্পের নতুন পদক্ষেপ: ধর্ম পুনরুদ্ধারের নামে কি পক্ষপাতিত্ব?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষার নামে গৃহীত কিছু পদক্ষেপ বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি নতুন সংস্থা তৈরি করেছেন, যা একদিকে যেমন রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের সমর্থন আদায় করেছে, তেমনই উদ্বেগে ফেলেছেন ভিন্ন মতাবলম্বীদের।

হোয়াইট হাউস ফেইথ অফিস, অ্যান্টি-খ্রিস্টান বিদ্বেষ দূরীকরণ বিষয়ক টাস্ক ফোর্স এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন—এই তিনটি প্রধান সংস্থা গঠন করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রায়শই তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আমরা আমাদের দেশে ধর্মকে ফিরিয়ে আনছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা সবসময় ঈশ্বরের অধীনে এক জাতি থাকব।”

তবে, সমালোচকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংকীর্ণ করে তুলছে।

তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে তিনি মূলত রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বর্ণিত ‘গির্জা ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ’-এর ধারণার পরিপন্থী।

এই সমালোচকদের মধ্যে এমন অনেক খ্রিস্টানও রয়েছেন যারা মনে করেন, এটি সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ না করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা এবং সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তও এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট, যেখানে বর্তমানে ট্রাম্পের মনোনীত বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যেকার বিভাজন রেখা কিছুটা শিথিল করেছে।

সমালোচকদের মতে, এর ফলে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে, ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের অন্যতম সদস্য এবং লেখক এরিক মেটাক্সাস-এর একটি মন্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেছেন, এই কমিশনের লক্ষ্য হলো—প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এই সংস্থাগুলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক, যিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান, বলেছেন, “আমরা এমন একটি জাতি, যা প্রার্থনা ও খ্রিস্টীয় মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে।”

তবে, সমালোচকরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় বহুত্ববাদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

মোটকথা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ধর্মীয় নীতিগুলো একদিকে যেমন তার রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করেছে, তেমনই তা যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যেকার সম্পর্কে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *