ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বর্তমানে বিতর্কের মুখে পড়েছে। ‘ডিজিটাল ইক্যুইটি অ্যাক্ট’ নামের এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘বর্ণবাদী’ আখ্যা দিয়ে এর সমাপ্তি চেয়েছেন।
প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ অপরিহার্য, সেখানে এমন একটি পদক্ষেপ ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন উদ্বেগের বিষয়।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সুবিধা দেওয়া। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার মানুষ, প্রবীণ নাগরিক, এবং কম সুযোগ পাওয়া মানুষের জন্য ডিজিটাল দুনিয়ার দ্বার উন্মোচন করার কথা ছিল।
ল্যাপটপ বিতরণ থেকে শুরু করে, ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ—সব কিছুই ছিল এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ট্রাম্পের আপত্তির কারণে এখন এর বাস্তবায়ন হুমকির মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ডিজিটাল ইক্যুইটি অ্যাক্ট-এর আওতায় প্রায় ২.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে যা প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি) বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, এবং বিভিন্ন অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল।
প্রকল্পটি সিনেটে উভয় দলের সমর্থন পেলেও, ট্রাম্পের আপত্তির কারণে এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘বর্ণবাদী’ এবং ‘অবৈধ’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
যদিও এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত করানো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘ইক্যুইটি’ শব্দটি ব্যবহারের কারণেই সম্ভবত ট্রাম্প এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। কারণ, তাঁর প্রশাসন বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি থেকে ‘বৈচিত্র্য’, ‘সমতা’ বা ‘অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক শব্দগুলো বাদ দিতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষের বাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই। গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এই হার আরও বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল ইক্যুইটি অ্যাক্টের মতো কর্মসূচিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর মাধ্যমে কেবল প্রযুক্তি সরবরাহ করাই নয়, বরং অনলাইনে নিরাপদ থাকতে এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতেও সহায়তা করার কথা ছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব আরও একবার সামনে এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি করা অপরিহার্য।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, বাংলাদেশের জন্যও এই ধরনের পদক্ষেপগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে, আমাদের দেশেও সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে।
সবার জন্য ডিজিটাল প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা গেলে, তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস