যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ডিজিটাল কর আরোপকারী দেশগুলোর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ডিজিটাল বিষয়ক নিয়ম-কানুনকে লক্ষ্য করে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ট্রাম্পের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং এর ফলস্বরূপ তিনি ওইসব দেশের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেন।
সম্প্রতি ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “যেসব দেশ আমাদের অসাধারণ আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর আঘাত হানবে, তাদের বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়াবো।” ডিজিটাল ট্যাক্স, ডিজিটাল পরিষেবা বিষয়ক আইন এবং ডিজিটাল বাজার সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন—এগুলো সবই আমেরিকান প্রযুক্তির ক্ষতি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরেই গুগল, অ্যাপল এবং মেটার মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ম-কানুন তৈরি করেছে। এই অঞ্চলের ডিজিটাল পরিষেবা বিষয়ক আইন (Digital Services Act) সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়।
এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (Digital Markets Act) ডিজিটাল একচেটিয়া কারবার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে, যা লঙ্ঘিত হলে কোম্পানিগুলোকে বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেনের মতো কয়েকটি ইইউ সদস্য দেশে ডিজিটাল পরিষেবা কর চালু রয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও এই ধরনের কর বিদ্যমান।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ইইউ’র প্রযুক্তি বিষয়ক নিয়ম-কানুনকে অপছন্দ করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও এসব নিয়মের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ট্রাম্পের অভিযোগ, চীনের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এসব নিয়মের আওতায় আসে না এবং তারা ছাড় পেয়ে যায়।
তিনি বলেন, “এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।” ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আমি সংশ্লিষ্ট দেশের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করব এবং আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও চিপসের (chips) ওপর রপ্তানি বিধিনিষেধ আরোপ করব।”
তবে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইইউ।
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র পাওলো পিনহো এক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব ভূখণ্ডে অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
উল্লেখ্য, এই হুমকির এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাসেলস তাদের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে ডিজিটাল বাণিজ্য বাধাগুলো মোকাবিলার অঙ্গীকার করা হয়।
এর আগে, গত জুন মাসে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ডিজিটাল পরিষেবা কর আরোপের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিতের হুমকি দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কানাডা সরকার তাদের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস