মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা দপ্তর ভেঙে দিচ্ছেন ট্রাম্প! এরপর কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়ার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিজ্ঞা পূরণের পথে হাঁটছেন। বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই আদেশের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষা বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস করা। এই পদক্ষেপের কারণ, এর ফলাফল এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ (Department of Education) দেশটির জাতীয় শিক্ষা নীতি দেখাশোনা করে। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময়ে এটি গঠিত হয়। এই বিভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য ফেডারেল ঋণ ও অনুদান বিতরণ করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য “পেল গ্রান্ট”। এছাড়া, শিক্ষা ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং বৈষম্য ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক আইনগুলি কার্যকর করার দায়িত্বও তাদের ওপর ন্যস্ত।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি হলো, শিক্ষা বিভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যাশিত ফল দিতে পারছে না। ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অফ এডুকেশনাল প্রোগ্রেস (NAEP) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অষ্টম শ্রেণির ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পঠন এবং ৭২ শতাংশ গণিতে দুর্বল ফল করেছে। যদিও এই ফল ​​২০২২ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়নি। তবে, ১৯৭০ এর দশকের শুরু থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গড় পঠন স্কোরে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

এই বিভাগের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণশীলদের অভিযোগ ছিল, শিক্ষা অঙ্গন বামঘেঁষা ধারণায় পরিপূর্ণ। তারা মনে করেন, শিক্ষার বিষয়টি রাজ্য সরকারগুলির হাতেই থাকা উচিত। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষা বিভাগের কর্মী সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করা হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের আগে বিভাগে ৪,১৩৩ জন কর্মী ছিলেন, যা বর্তমানে অর্ধেকেরও কম, প্রায় ২,১৮৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে অথবা প্রশাসনিক ছুটিতে যেতে হয়েছে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের শিরোনাম হলো “অভিভাবক, রাজ্য এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শিক্ষার ফলাফল উন্নত করা।” এই আদেশে শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদেশটিতে বলা হয়েছে, বিভাগটি বন্ধ করার ফলে শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা একটি “ব্যর্থ” হওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।

তবে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে না। কারণ, কোনো ফেডারেল বিভাগের বিলুপ্তি ঘটানোর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে অনেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সিনেটে এই প্রস্তাব পাস করতে হলে ১০০ জন সদস্যের মধ্যে ৬০ জনের সমর্থন প্রয়োজন, যা রিপাবলিকানদের জন্য কঠিন হতে পারে।

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পারফরম্যান্স কেমন? অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD) এর মতে, শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৪১টি দেশের মধ্যে ৮ম স্থানে রয়েছে। তবে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতার বিচারে দেশটি ১৯তম স্থানে। গণিতে দেশটি ৩৭টি OECD দেশের মধ্যে ২৮তম এবং বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে ১২তম স্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প বলেছেন, শিক্ষা বিষয়ক পরিষেবাগুলো বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে এবং রাজ্য সরকারগুলো এর প্রধান দায়িত্ব নেবে। তবে, এই বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়া এখনো অনিশ্চিত।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *