মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের জন্য নতুন সুবিধা: ট্রাম্পের নীতির প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নতুন আইন দেশটির শ্রমিকদের জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এই আইনের মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের করের বোঝা কমানো হয়েছে, আবার শিক্ষা ও শিশু-শিক্ষার সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই আইনটি কিভাবে আমেরিকান শ্রমিকদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
এই আইনের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে টিপসের উপর কর মওকুফ, অতিরিক্ত সময়ের কাজের (ওভারটাইম) জন্য কর ছাড়, কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং শিশু-শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা করার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থার স্থায়ীত্ব আনা হয়েছে।
প্রথমত, টিপসের উপর করের বিষয়টি আসা যাক। নতুন আইনে, কর্মীদের উপার্জিত টিপসের একটি নির্দিষ্ট অংশ করমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই নিয়ম অনুযায়ী, কর্মীরা বছরে ২৫,০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা) পর্যন্ত টিপস থেকে পাওয়া আয়ের উপর কর দিতে পারবেন না। এই সুবিধা ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
তবে, এই সুবিধা পেতে হলে কর্মীদের বার্ষিক আয় ১,৫০,০০০ ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা) নিচে হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ওভারটাইমের ক্ষেত্রেও কর্মীদের জন্য কর ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে। এই আইনে, যারা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, তাদের অতিরিক্ত সময়ের আয়ের উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ করমুক্ত করা হবে।
এই সুবিধা অনুযায়ী, কর্মীরা ১২,৫০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা) পর্যন্ত অতিরিক্ত আয়ের উপর কর ছাড় পেতে পারেন। এই সুবিধাটিও ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে, এই আইনে কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোতে “পেল গ্রান্ট”-এর (Pell Grants) সুযোগ আরও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, শ্রমিকরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ১লা জুলাই থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
শিশুদের দেখাশোনার সুবিধার জন্য, এই আইনে কর্মক্ষেত্রে শিশু-শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য কর ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, কর্মীরা তাদের শিশুদের জন্য ভালো মানের ডে-কেয়ার (Day Care) সুবিধা পাবেন এবং এর ফলে অনেক নারী কর্মী উপকৃত হবেন।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই আইনে, কর্মীদের স্টুডেন্ট লোন পরিশোধে সহায়তা করার জন্য, কোম্পানিগুলো কর্মীদেরকে করমুক্ত সুবিধা দিতে পারবে।
এই সুবিধাটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং এর পরিমাণ মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করা হবে।
তবে, এই আইন নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই ধরনের কর ছাড়ের ফলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন, টিপসের উপর কর মওকুফের ফলে, কিছু কর্মী তাদের আয়ের পুরোটা নাও পেতে পারেন। এছাড়াও, ওভারটাইমের উপর কর ছাড়ের ফলে বেশি আয়ের সুযোগ তৈরি হলেও, কর্মীদের কাজের চাপ আরও বাড়তে পারে।
এই আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়াতে সাহায্য করবে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এই আইনের সুফল পেতে হলে, কর্মীদেরকে এর বিস্তারিত বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে।
এছাড়া, এই আইনের বাস্তবায়ন কিভাবে হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।