ওষুধের বিজ্ঞাপনে ট্রাম্পের ফুঁ: কী ঘটতে চলেছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসক্রিপশন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করতে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে (এফডিএ) নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। টেলিভিশনে, ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত এইসব বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির বিরোধিতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো বিষয়গুলো।

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হল, বিজ্ঞাপনগুলোতে যাতে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য না থাকে, তা নিশ্চিত করা। যদিও এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিজ্ঞাপনকে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এফডিএ-কে বিজ্ঞাপনগুলোর বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। তবে, এই কাজটি সহজ হবে না, কারণ আদালতে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে প্রায়ই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এফডিএ-কে। এমনকী, অনেক সময় আইনি জটিলতা এড়াতে তারা নমনীয়ও থাকে।

বর্তমানে বিদ্যমান কিছু নিয়ম পরিবর্তন করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, টেলিভিশনে ওষুধের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত একটি পুরনো নিয়ম পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত, টিভিতে ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া কঠিন ছিল, কারণ এফডিএ-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রস্তুতকারকদের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হতো।

১৯৯৭ সালে সেই নিয়ম শিথিল করার পর কোম্পানিগুলো সংক্ষিপ্ত তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানতে উৎসাহিত করতে শুরু করে। এফডিএ এখন এই “ফাঁকফোকর” বন্ধ করতে চাইছে, যা তাদের মতে “গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো” গোপন করতে ব্যবহৃত হয়।

তবে, নিয়ম তৈরি এবং তা কার্যকর করতে সাধারণত দীর্ঘ সময় লাগে। কোনো পরিবর্তনের জন্য জনগণের মতামত নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হয়। যেমন, ওষুধের বিজ্ঞাপনে সহজ ভাষা ব্যবহারের নিয়ম তৈরি করতে ১৫ বছরের বেশি সময় লেগেছিল। এমনকী, দ্রুত পদক্ষেপ নিলে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।

ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো মনে করে, টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তারা রোগীদের সচেতন করতে পারে। তাদের মতে, সঠিক ও বিভ্রান্তিকর নয় এমন বিজ্ঞাপন রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়।

অন্যদিকে, এফডিএ কমিশনার মার্টি মাকারি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে, বিশেষ করে ইন্সটাগ্রামে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কারণ, এখানে রোগীরা বিভিন্ন ধরনের প্রভাবকের (ইনফ্লুয়েন্সার) মাধ্যমে ওষুধের প্রচার দেখে বিভ্রান্ত হতে পারেন। এফডিএ-র নিয়মাবলী শুধুমাত্র ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য প্রযোজ্য হওয়ায়, এই ধরনের প্রচারণার উপর নজরদারি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানকারী এবং ঔষধ সরবরাহকারী কিছু নতুন সংস্থা বর্তমানে এফডিএ-র নজরদারির বাইরে রয়েছে। এমনকী, ওজন কমানোর ঔষধের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য গোপন করার অভিযোগও উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এই ধরনের প্রভাবক এবং টেলিস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে এফডিএ-র আওতাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যাতে তারা ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য জানাতে বাধ্য থাকে। তবে, এখনো পর্যন্ত বিলটি নিয়ে কোনো শুনানি হয়নি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *