ট্রাম্পের বিস্ফোরক ঘোষণা! ওষুধ-এর দামে ১৫০০% ছাড়? আসল ঘটনা!

ডোনাল্ড ট্রাম্প ওষুধের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে এর বাস্তবতা কতটুকু?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ওষুধের দাম কমানোর কথা বলে আসছেন। সম্প্রতি তিনি দাম কমানোর বিষয়ে আরও জোরালো মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ওষুধের দাম ১,২০০ থেকে ১,৫০০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এত বড় অংক কমানো প্রায় অসম্ভব।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কিভাবে এটা করতে চাইছেন? জানা গেছে, ট্রাম্পের মূল পরিকল্পনা হলো ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে সেই একই দামে ওষুধ বিক্রি করতে বাধ্য করা, যে দামে তারা ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে বিক্রি করে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি ওষুধ যদি অন্য দেশে ১ ডলার-এ বিক্রি হয়, তবে আমেরিকাতেও সেই দামে বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ওষুধের জন্য অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি অর্থ খরচ করে।

ট্রাম্প তার আগের মেয়াদেও এই নীতি চালুর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি একটি মডেল প্রোগ্রামের মাধ্যমে মেডিকেয়ারের (যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমা) অধীনে থাকা ৫০টি ওষুধের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেই নিয়ম বাতিল করেছেন।

এবার ট্রাম্প ওষুধ কোম্পানিগুলোকে চাপ দিচ্ছেন, যাতে তারা স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রের রোগীদের জন্য অন্য দেশের সর্বনিম্ন মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগকে (Department of Health and Human Services) এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য একটি নিয়ম তৈরি করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, ওষুধ আমদানি বাড়ানো, রপ্তানির ওপর নজরদারি এবং খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে (Food and Drug Administration) অনুমোদন বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তবে তেমন কোনো ফল আসেনি। এরপর ট্রাম্প ১৭টি বড় ওষুধ কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের চিঠি লেখেন এবং তাদের এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। চিঠিতে তিনি কোম্পানিগুলোকে তাদের ওষুধের দাম কমানোর জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেসাই জানান, “এটা একটি বাস্তব সত্য যে, আমেরিকানরা একই ওষুধের জন্য অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি দাম দেয়। আর এই অন্যায্য বোঝা দূর করতে ট্রাম্পের মতো কোনো প্রেসিডেন্ট এত কাজ করেননি।”

ওষুধের দাম কমানোর জন্য ট্রাম্প আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। এর মধ্যে রয়েছে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা। যদিও এটি ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং একসময় জেনেরিক ওষুধের সংকট তৈরি করতে পারে।

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যেখানে ওষুধের আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। এই শুল্কের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে। তাছাড়া, ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারক, বীমা কোম্পানি এবং ফার্মেসিগুলোর মধ্যে জটিল সম্পর্ক রয়েছে।

তাই শুধু প্রস্তুতকারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই সমস্যার সমাধান করা কঠিন।

ওষুধের দাম কমানোর ট্রাম্পের এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এই বিষয়ে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *