ভুয়া? ট্রাম্পের ‘১৫০০% দাম কমানো’র দাবি নিয়ে তোলপাড়!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, তিনি ওষুধের দাম ১,২০০ থেকে ১,৫০০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছেন। তবে এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, এত বিশাল পরিমাণ মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনা নেই, বরং এটি গাণিতিকভাবে অসম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (Associated Press) এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সম্প্রতি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে প্রেসক্রিপশন ওষুধের ক্ষেত্রে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ মূল্য মডেল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠান।

এর কয়েক দিন পরেই তিনি সাংবাদিকদের কাছে ওষুধের দাম কমানোর এই বিস্ফোরক দাবি করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার স্কাফার সেন্টারের স্বাস্থ্য নীতি বিভাগের পরিচালক জিওফ্রে জয়েস এই দাবিকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ওষুধের দাম যদি ১০০ শতাংশের বেশি কমে, তাহলে ওষুধ কোম্পানিগুলো রোগীদের টাকা দেবে, যা কার্যত অসম্ভব।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মারিয়ানা সোকালও ট্রাম্পের এই হিসাবকে ‘বোঝা কঠিন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তার মতে, বাস্তবে ফার্মেসিগুলোতে রোগীদের জন্য ওষুধের দামে এত বড় পরিবর্তন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কুশ দেসাই অবশ্য বলেছেন, আমেরিকানরা অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় একই ওষুধের জন্য অনেক বেশি দাম দেয়, এটি একটি ‘বস্তুনিষ্ঠ সত্য’।

তাদের সরকার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।

হোয়াইট হাউজ ওষুধের দামের পার্থক্য সম্পর্কিত একটি চার্ট সরবরাহ করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের দামের তুলনা দেখানো হয়েছে।

তবে দাম কমানোর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। ট্রাম্প নিজেও বলেছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ওষুধের দাম ১,২০০ থেকে ১,৪০০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হলো, এখানে ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দাম নিয়ে দর কষাকষির পদ্ধতি ভিন্ন।

ট্রাম্প গত সপ্তাহে ১৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাদের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর সর্বনিম্ন দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মে মাসে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের ৩০ দিনের মধ্যে ওষুধের দাম কমানোর জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

অন্যথায়, সরকার ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফল কতটুকু হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিশেষ করে, যারা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমার ওপর নির্ভরশীল, তাদের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

মারিয়ানা সোকাল উল্লেখ করেন, যদি সত্যিই ওষুধের দাম এত কমে আসত, তবে ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেরাই তা ফলাও করে প্রচার করত।

কারণ, দীর্ঘদিন ধরে তারা ওষুধের দাম নিয়ে সমালোচনার শিকার হচ্ছে। জিওফ্রে জয়েসও মনে করেন, এমন বিশাল মূল্য হ্রাসের কোনো সম্ভাবনা নেই।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *