মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে দেশটির অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এর ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে পারে।
জানা গেছে, খুব শীঘ্রই শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (Bureau of Labor Statistics – BLS) প্রধান এবং ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের (Federal Reserve – Fed) সদস্য পদে নিয়োগ দেবেন ট্রাম্প। এই দুটি পদই মার্কিন অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএলএস প্রধানের দায়িত্ব হলো নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ করা। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নিয়োগকর্তা এবং সরকারি সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে। এছাড়াও, এই পদে থেকে ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী চেয়ারম্যান হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ ও মন্তব্যের কারণে এই দুটি পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর মানুষের আস্থা কমে যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি ট্রাম্প বিএলএস কমিশনার এরিকা ম্যাকএন্টারফারকে (Erika McEntarfer) বরখাস্ত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এরিকা অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত কারসাজি করে তার প্রেসিডেন্সিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি হাজির করতে পারেননি।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের অভাবে ফেডারেল রিজার্ভ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএলএস-এর তথ্যের ওপর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থা তাদের বিনিয়োগ, বেতন ও কর্মী নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। ফেডারেল রিজার্ভও তাদের মুদ্রানীতি এবং সুদহার নির্ধারণের জন্য বিএলএস-এর তথ্যের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর অ্যাড্রিয়ানা কুগলার (Adriana Kugler) আগামী ৮ই আগস্ট পদত্যাগ করবেন। ফলে ট্রাম্প এই শূন্য পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারবেন। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প এমন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন যিনি সুদের হার কমানোর পক্ষে।
এমন ব্যক্তি পরবর্তীতে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানও হতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সুদের হার বৃদ্ধি করার জন্য সমালোচনা করে থাকেন। এমনকি তিনি পাওয়েলকে বরখাস্ত করারও হুমকি দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভ তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে চায়। তারা এমন নীতি গ্রহণ করতে চায় যা হয়তো কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
বর্তমানে, ট্রাম্প বিভিন্ন বাণিজ্য শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। এমতাবস্থায়, ফেডারেল রিজার্ভ এবং অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার কারণে ব্যবসা, বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতির প্রতি আস্থা কমতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে, যা বন্ডের ফলন বাড়াবে এবং আমেরিকানদের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি করবে।
মোটকথা, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে কিনা, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন