যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারের পথে বাধা হতে পারে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং তার অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আলোচনা প্রায়ই আলাদাভাবে করা হয়। তবে, এই দুটি বিষয় আসলে একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্কযুক্ত।
ট্রাম্প যেখানে ক্ষমতা আরও বাড়াতে চাইছেন, সেখানে অর্থনীতির দুর্বলতা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প কংগ্রেস ও আদালতের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তার বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
যদিও নিম্ন আদালতগুলো তার কিছু পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, ট্রাম্প এখনো তার ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প এখন বেশ চাপে আছেন। জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে।
শেয়ার বাজার, বন্ড মার্কেট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম—সবকিছুই তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিম্নমুখী। শুল্ক নীতিমালায়ও তাকে প্রায়ই পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কারণে জনগণের মধ্যে যে অসন্তোষ বাড়ছে, তা সম্ভবত কংগ্রেস, সুশীল সমাজ, আদালত এবং সাধারণ মানুষকে তার ক্ষমতা খর্ব করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উৎসাহিত করবে।
ডার্টমাউথ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্রেন্ডন নাইহান বলেছেন, ট্রাম্পের অর্থনীতির ক্ষতি তাকে সাংবিধানিক কাঠামো দুর্বল করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অতীতেও এমন সময় এসেছে, যখন নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে, অনেক আইন বিশেষজ্ঞ ও ইতিহাসবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারের এই প্রচেষ্টা নজিরবিহীন।
তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন—আইন সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নমনীয়তাও দেখা গেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন এরউইন চেমেরিনস্কি বলেছেন, “আমরা এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি, যেখানে একজন প্রেসিডেন্ট সংবিধান ও আইনের প্রতি এত অবজ্ঞা দেখাচ্ছেন।”
সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
অনেকে মনে করেন, তিনি তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করছেন। বিশেষ করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তার পদক্ষেপ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন।
তবে, ট্রাম্পের সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, যারা ট্রাম্পকে সমর্থন করেন, তাদের মধ্যে অনেকেই তার এসব পদক্ষেপকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সমালোচকরা তার অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও, কিভাবে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে তারা দ্বিধাবিভক্ত।
এই বিভক্তির একটি কারণ হলো রাজনৈতিক কৌশল। অনেকে মনে করেন, গণতন্ত্রের প্রতি হুমকিগুলো তুলে ধরার চেয়ে অর্থনীতির ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আরেকটি বিতর্ক হলো, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো থামাতে আদালতের ওপর কতটা নির্ভর করা যায়।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সুপ্রিম কোর্ট অতীতেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রসারিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
তবে, ব্রাউন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কোরি ব্রেস্টস্নাইডারের মতে, অতীতে নাগরিক আন্দোলনগুলোই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করতে বেশি সফল হয়েছে।
আর্থিক দিক থেকে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই সমালোচনার শিকার হচ্ছেন।
তার প্রথম মেয়াদে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থা ছিল, কিন্তু এখন বিভিন্ন জরিপে তার অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের প্রতি অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।
শুল্ক নীতিমালার কারণে পণ্যের দাম বাড়লে এবং বাজারে ঘাটতি দেখা দিলে, তার এই দুর্বলতা আরও বাড়তে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সমালোচকরা তার অর্থনৈতিক এজেন্ডাকে প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত, কিন্তু তারা কিভাবে আইনের শাসনের প্রতি তার চ্যালেঞ্জের জবাব দেবে, তা নিয়ে বিভক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র কেমন হবে, তা নির্ভর করবে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ, সুশীল সমাজ এবং আদালতের প্রতিরোধের ওপর।
ইতিহাস বলে, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সাধারণত সব ক্ষেত্রেই একই সঙ্গে বাড়ে অথবা কমে।
তাই, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যই হয়তো নির্ধারণ করবে, তিনি শেষ পর্যন্ত কতটা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন