যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষা খাতে ব্যাপক কাটছাঁট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের আমলে শিক্ষা বিভাগের কর্মী ছাঁটাই এবং গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্তে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে, চলমান গবেষণা প্রকল্পগুলো বাতিল করার ফলে কয়েক কোটি ডলারের অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রায় অর্ধেক কর্মীকে চাকরি হারাতে হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গত সপ্তাহেই ১,৩০০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং প্রায় ৬০০ জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
গবেষণা, তথ্য ও পরিসংখ্যান বিষয়ক বিভাগগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মী বিষয়টিকে ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি জানান, “মানুষজন কাঁদছিল, তাদের মানবিক দিকটা দেখে খারাপ লাগছিল।
তারা তো কেবল অফিসের কর্মচারী ছিল না, বরং তারা দেশের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। বিভিন্ন রাজ্যের আইন মেনে চলতে সহায়তা করত।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কারণে যেন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
বিশেষ উদ্বেগের কারণ হলো, বহু বছর ধরে চলা গবেষণা প্রকল্পগুলো যখন প্রায় শেষের দিকে, ঠিক সেই মুহূর্তে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের (Institute of Educational Sciences – IES) প্রায় সকল কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষা গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমান) ১৬০টির বেশি চুক্তি ও অনুদান বাতিল করা হয়েছে।
বাতিল হওয়া গবেষণা প্রকল্পগুলোর মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা পাঁচ বছর মেয়াদী ছিল।
একজন সাবেক আইইএস কর্মী জানান, “আমরা চতুর্থ বছরে ছিলাম, অর্থাৎ গবেষণার অনেক কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন সেগুলো আর আলোর মুখ দেখবে না।”
তিনি মিশিগানের একটি সাক্ষরতা কর্মসূচির প্রাথমিক প্রভাব নিয়ে করা একটি গবেষণার উদাহরণ দেন। বর্তমানে সেই গবেষণার ফল আর প্রকাশ করা হবে না।
ওই কর্মী আরও বলেন, “গবেষণায় এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার পরেও এখন করদাতারা, স্কুল এবং শিক্ষার্থীরা কিছুই পাবে না।
ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহন যদিও তার মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপকে শিক্ষাখাতে ‘ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে কীভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা সম্ভব?
তাদের প্রশ্ন, “যেখানে আমাদের কাজ ছিল শ্রেণীকক্ষে কী কাজ করছে, কোনটি করছে না, কাদের জন্য কাজ করছে এবং কাদের জন্য করছে না, তা খুঁজে বের করা, সেই অফিসটিই যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কিভাবে শিক্ষার উন্নতি হবে?”
নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা র্যাচেল ডিনকেস জানান, “গবেষণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের জন্য কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা যায়, সেই বিষয়ে আমাদের হাতে থাকা তথ্যগুলো আর কাজে আসবে না।
এছাড়া, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভালো ফল অর্জনের জন্য যে সমস্ত প্রমাণ ভিত্তিক কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হবে।”
২০১২ সাল থেকে একটি ফেডারেল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা শিক্ষা গবেষক জশুয়া স্টুয়ার্ট জানান, শিক্ষা বিভাগের আঞ্চলিক শিক্ষা গবেষণাগারের জন্য তিনি কাজ করছিলেন।
তিনি জানান, মাঝপথে তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের এই বিষয়ে জানাতে হয়েছে।
মেরিল্যান্ডের একটি ফেডারেল আদালত এরই মধ্যে শিক্ষা বিভাগসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ওপর অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
এছাড়া, ২০টি রাজ্য এবং কলাম্বিয়া জেলার অ্যাটর্নি জেনারেল-ও (আইন বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান