মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের দাম: ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের ফারাক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের দাম অর্ধেক করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, আর তা মূল্যস্ফীতির দ্বিগুণের বেশি হারে।
গত গ্রীষ্মে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমি ক্ষমতায় এলে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম অর্ধেক করে দেব।
কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে দ্রুতগতিতে। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু রাজ্যে বিদ্যুতের বিল আকাশ ছুঁয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের শেষে বিদ্যুতের দাম গত এক বছরে ৫.৫ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির হারের দ্বিগুণের বেশি। এই কারণে অনেক রাজ্যে সাধারণ মানুষজন তাদের বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে মেইন, নিউ জার্সি, ওয়াইওমিং, ইউটাহ এবং ইলিনয়ে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে উদ্বেগে সাধারণ মানুষ। সেখানকার এক বাসিন্দা চেরিলিন বেকার জানান, গত এক বছরে তার বিদ্যুতের বিল প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা খুবই কঠিন একটা পরিস্থিতি।
সময় মতো বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাকে কিস্তিতে বিল দিতে হচ্ছে। এই বিষয়টি তার দৈনন্দিন জীবনে দুশ্চিন্তা যোগ করেছে।
ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসিসটেন্স ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতি ৬ জন পরিবারের মধ্যে ১ জন তাদের বিদ্যুতের বিল বকেয়া রেখেছেন। তাদের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়া।
এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন।
এআইয়ের চাহিদা মেটাতে বিশাল ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের ব্যবহার গত এক দশকে তিনগুণ বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ গুগল সার্চের চেয়ে এআইয়ের মাধ্যমে কোনো কাজ করতে ১০ গুণ বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এআইয়ের ব্যবহার আরও বাড়বে, ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে।
ডেটা সেন্টারগুলোর বিদ্যুতের ব্যবহার ২০২৮ সালের মধ্যে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। পুরনো অবকাঠামো মেরামতের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ও বিতরণ ব্যবস্থা ১৯৬০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধিও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সহায়তা করছে। প্রাকৃতিক গ্যাস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রধান উৎস, যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ।
এছাড়াও, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) এর মতে, এ বছর আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম ৪ শতাংশ এবং আগামী বছর ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতেও প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প প্রশাসন উইন্ড ফার্ম প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
তবে, টেক্সাস এবং আইওয়ার মতো কিছু রাজ্যে, জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি বায়ুবিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। কারণ, বাংলাদেশেও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে।
ভবিষ্যতে হয়তো ডেটা সেন্টার এবং এআইয়ের ব্যবহারের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। তাই, বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন