ট্রাম্পের এলিটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: আমেরিকার জীবনে গভীর প্রভাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হানছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতা খর্ব করতে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করছেন তিনি।

এর মধ্যে রয়েছে সরকার, আইন বিভাগ, গণমাধ্যম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাত এবং পররাষ্ট্র নীতি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ প্রতিশোধের চেয়েও অনেক বেশি কিছু।

ট্রাম্পের এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো, দেশের নীতি নির্ধারকদের তার রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে গড়ে তোলা। এর অংশ হিসেবে তিনি আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, বড় বড় ল ফার্মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা হ্রাস করছেন এবং পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনছেন।

এমনকি, দেশের সংস্কৃতিতেও পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তিনি।

সম্প্রতি, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ সীমিত করতে বাধ্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের মুখোশ পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া, দেশটির শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপের ঝুঁকিতে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে প্রতিবাদ চলছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই চাপ আরও বাড়ানো হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন আইনজীবীদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক’ মামলা করেন, তাদের চিহ্নিত করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে একটি নামকরা ল ফার্ম, যারা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে এবং তাদের কর্মীদের মধ্যে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নীতি বাতিল করতে সম্মত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ট্রাম্পের এই কৌশল মূলত তার রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার একটি অংশ। এর মাধ্যমে তিনি এমন একটি ‘ঐতিহ্যবাদী’ ধারা তৈরি করতে চাইছেন, যা ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী এবং উদারনৈতিক মহলের বিরুদ্ধে যায়।

তার সমালোচকদের মতে, এর মাধ্যমে তিনি সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির আধিপত্য ভাঙতে চাইছেন এবং এর মাধ্যমে আমেরিকাকে আরও রক্ষণশীল মূল্যবোধের দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন।

ট্রাম্পের এই নীতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে এমন একজনকে বেছে নিয়েছেন, যিনি শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো অভিজ্ঞতাই রাখেন না।

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি বার্তা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি দৃষ্টান্ত। যারা মিডিয়া, আইন ও ব্যবসাখাতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাদের ক্ষমতা খর্ব করার এটি একটি কৌশল।

এর ফলে মৌলিক স্বাধীনতা হ্রাস পাওয়ার এবং গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

ট্রাম্পের এই নীতির কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি এমন কিছু বিচারকের সমালোচনা করছেন, যারা তার প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে আইনের শাসনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হতে পারে।

ট্রাম্পের এই ক্ষমতা প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো, তার ভাষায়, আমেরিকার ‘ঐতিহ্য’ পুনরুদ্ধার করা। তিনি মনে করেন, বামপন্থী নীতিগুলোর কারণে আমেরিকার গৌরব ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

তার মতে, শিল্পখাত ধ্বংস হয়েছে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিধিনিষেধের কারণে স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে উদারনৈতিক মূল্যবোধের বিস্তার ঘটেছে।

ট্রাম্পের এই নীতির সঙ্গে ‘প্রজেক্ট ২০২৫’-এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, রক্ষণশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে আমেরিকার নীতিগুলোতে পরিবর্তন আনা।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো আমেরিকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *