ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: ট্রাম্পের বিশেষ দূতের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-এর ইরান সংক্রান্ত নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি ইরানের আণবিক কর্মসূচি সীমিত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দেশটির পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এই পরিবর্তন উভয় দেশের মধ্যে আলোচনাকে আরও কঠিন করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে, যা ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে সম্ভাব্য হামলার ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
জানা গেছে, আগামী শনিবার ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথমে ইতালিতে এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, পরে তা ওমানেই অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে উইটকফ বলেন, “ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি কেবল তখনই সম্পন্ন হবে, যখন সেটি ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে, যার অর্থ ইরানকে অবশ্যই তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরি ও সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।”
এর আগে, এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বেসামরিক উদ্দেশ্যে ৩.৬৭% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে তারা ৬০% এবং অন্য ক্ষেত্রে ২০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে। এটা হতে পারে না। তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর জন্য ৩.৬৭%-এর বেশি সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উইটকফের এই দ্বি-মুখী অবস্থান বেশ কঠিন। হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রথমে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে বেসামরিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে এবং চূড়ান্ত চুক্তিতে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার কথা বলা হবে।
অন্যদিকে, এমনও হতে পারে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, উইটকফের আলোচনার কৌশল আসলে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার শামিল, যে চুক্তি থেকে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
এদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অধিকারের কথা বারবার বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, উইটকফের কঠোর অবস্থান তেহরানে উদ্বেগের সৃষ্টি করতে পারে এবং কট্টরপন্থীদের শক্তিশালী করতে পারে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর আস্থা রাখতে নারাজ।
আলোচনা প্রসঙ্গে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে উইটকফের বৈঠকের ফলস্বরূপ ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, যা গত এক দশকের মধ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারতো।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসিও এই সপ্তাহে ইরান পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে। তিনি দেশটির পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান