মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল আলোচিত জেফরি এপস্টিন মামলা আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ এবং কংগ্রেসনাল তদন্তের কারণে বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
বিশেষ করে, অভিযুক্ত ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে হওয়া কথোপকথনের টেপ ও লিখিত রূপ (ট্রান্সক্রিপ্ট) প্রকাশের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে হওয়া কথোপকথনের লিখিত রূপ প্রকাশের কথা বিবেচনা করছেন।
ম্যাক্সওয়েল, যিনি শিশুদের যৌন পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্ল্যাঞ্চের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে। এই তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি, হাউস ওভারসাইট কমিটি, এই মামলার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছে তথ্য চেয়ে ডজন খানেক সমন জারি করেছে।
এই তালিকায় রয়েছেন বিচার বিভাগ, ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড, উইলিয়াম বার, জেফ সেশনস, লরেটা লিঞ্চ, এরিক হোল্ডার, আলবার্তো গঞ্জালেস, এফবিআই-এর সাবেক পরিচালক জেমস কোমি ও রবার্ট মুলার-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের আইনজীবীরা গ্র্যান্ড জুরির গোপনীয় তথ্যাদি প্রকাশের বিরোধিতা করছেন।
তাঁদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ম্যাক্সওয়েলের আইনি অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে। ম্যাক্সওয়েলের আইনজীবী ডেভিড অস্কার মার্কাস আদালতের কাছে আবেদন করেছেন, যেন এই সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ না করা হয়।
জেফরি এপস্টিন ২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের যৌন নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ ছিল।
এই ঘটনার পর, এপস্টিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়েও অনেক কথা উঠেছে। ১৯৯০ এর দশকে এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।
যদিও ট্রাম্প কখনোই এপস্টিনের সঙ্গে কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে তিনি ম্যাক্সওয়েলকে ক্ষমা করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার সঙ্গে জড়িত তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।
একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি উঠছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য প্রকাশের ফলে মামলার তদন্তের গতিপথ প্রভাবিত হতে পারে, অথবা ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনে নতুন করে আঘাত লাগতে পারে।
হাউস ওভারসাইট কমিটির এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে এপস্টিন মামলার তদন্তকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।
একইসঙ্গে, এই মামলার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্য ও নথিপত্র সামনে আসার কারণে, ভবিষ্যতে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন