ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকাবাসীর বিদেশে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে বসবাস করা আমেরিকান নাগরিকদের অভিজ্ঞতা আগের চেয়ে ভিন্ন হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে থাকা আমেরিকানদের এখন প্রায়ই ট্রাম্প এবং তাঁর নীতি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি তাঁদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষ আমেরিকান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা যখন নিজেদের আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেন, তখন আলোচনা মোড় নেয় ট্রাম্পের দিকে।
বিশেষ করে ইউরোপ ও ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
যেমন, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে পড়াশোনা করা মারি সান্তোস নামের এক তরুণী জানান, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই এক ডাক্তার তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘এখন আমেরিকান হওয়াটা বেশ ইন্টারেস্টিং, তাই না?’ মারি তখন অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তাঁর অসুস্থতার চেয়ে ডাক্তারের কাছে ট্রাম্পের প্রসঙ্গটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ফ্রান্সে বসবাস করা ৩১ বছর বয়সী অ্যান্থনি মুসিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর কাছে এখন প্রায়ই জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনি কি এখন ফ্রান্সে থাকতে পেরে খুশি?’ এই ধরনের প্রশ্নগুলো তাঁকে খানিকটা বিব্রত করে।
তাঁর মতে, ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্যও এই উদ্বেগের কারণ। গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্ক থেকে ‘নিজের করে নেওয়া’, পানামাকে ‘ফেরত পাওয়া’ অথবা কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার মতো কথাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দায়ী করা এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করা—এসব পদক্ষেপও অনেককে হতাশ করেছে।
বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে এলন মাস্ক এবং টেসলার সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অনেকে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতে এই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
তবে, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি খুব একটা বিদ্বেষপূর্ণ নয়। বিভিন্ন দেশে থাকা আমেরিকানরা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে মানুষজন এখন কিছুটা সতর্কভাবে কথা বলছেন।
অন্যদিকে, যারা ট্রাম্পের সমর্থক, তাঁদেরও এই পরিস্থিতিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কানাডায় বসবাস করা জর্জিনা বার্ক নামের একজন ট্রাম্প সমর্থক জানান, তাঁকে এখন প্রায়ই শুনতে হয়, ‘আপনি কীভাবে তাঁকে ভোট দিতে পারেন?’
তিনি মনে করেন, ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকানদের প্রতি যে বিরূপ মনোভাব ছিল, এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়ে ভিন্ন।
যুক্তরাজ্যে রিপাবলিকানদের সংগঠন ‘রিপাবলিকানস ওভারসিজ’-এর গ্রেগ সোয়েনসন মনে করেন, অন্য দেশে একজন আমেরিকান হিসেবে বসবাস করা এখনও ইতিবাচক।
তিনি স্বীকার করেন, ট্রাম্প অনেক সময় বিতর্কিত কথা বলেন। তবে তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট এবং আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করাটা এখনও লাভজনক।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য মাধ্যমেও এই নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি, আয়ারল্যান্ডে বসবাস করা এক আমেরিকান দম্পতির একটি পোস্টের জবাবে একজন আইরিশ নাগরিক লিখেছেন, ‘আমরা অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং আমেরিকানদের প্রতি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।
তবে ভালো খবর হলো, আমরা আইরিশ, তাই আমরা আমাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি না।’
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস