আতঙ্কের সৃষ্টি! ট্রাম্পের শুল্ক: বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের কবলে বিশ্ব বাণিজ্য: সময়রেখা ও প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তার একটি সময়রেখা তৈরি হয়েছে। এই নীতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ফেলেছে গভীর প্রভাব।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই শুল্কের বিষয়ে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেন। তিনি বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, দেশটির অধিকাংশ পণ্যের ওপর কর আরোপ করেন।

এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। শুধু তাই নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে উত্তর আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) নতুন করে আলোচনা করতেও তিনি শুল্কের হুমকি ব্যবহার করেন।

জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পের চীনবিরোধী শুল্কের বেশিরভাগই বহাল রেখেছেন, পাশাপাশি কিছু নতুন বিধিনিষেধও আরোপ করেছেন। তবে বাইডেন প্রশাসন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির কথা জানিয়েছে।

আসুন, দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো:

২০শে জানুয়ারি: ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের ভাষণে তিনি বিদেশি দেশগুলোকে শুল্ক ও করের মাধ্যমে “মার্কিন নাগরিকদের সমৃদ্ধ করার” প্রতিশ্রুতি দেন।

১লা ফেব্রুয়ারি: ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

৪ঠা ফেব্রুয়ারি: চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ এবং গুগল-এর বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়।

১০ই ফেব্রুয়ারি: ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এর ফলে, ২০১৮ সালে ইস্পাতের ওপর আরোপিত শুল্কের ছাড় বাতিল করা হয় এবং অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়।

১৩ই ফেব্রুয়ারি: ট্রাম্প “পাল্টা” শুল্কের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যেখানে অন্য দেশগুলো যেসব হারে শুল্ক আরোপ করে, যুক্তরাষ্ট্রও সেই হারে শুল্ক আরোপ করবে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

৪ঠা মার্চ: ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। তবে, তিনি কানাডার জ্বালানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। একই সঙ্গে, চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের শুল্ক দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করেন।

১০ই মার্চ: চীন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্যে রয়েছে মুরগি, শুকরের মাংস, সয়াবিন এবং গরুর মাংস।

১২ই মার্চ: ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর করেন। উভয় ধাতুর ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়।

এপ্রিল মাসের শুরুতে, ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে আরও জটিল করে তোলে। এই পদক্ষেপগুলোর কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য হয় এবং এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

এই শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বর্তমানে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ কিভাবে আরো প্রসারিত হবে, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে, পরিস্থিতি এখনো বেশ জটিল এবং অনিশ্চিত।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *