ট্রাম্পের আমলে ক্যাম্পাস: যৌন নিপীড়নে অভিযুক্তদের রক্ষায় নিয়ম, ক্ষতিগ্রস্তদের কী হবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়ন বিষয়ক নিয়মকানুন পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে প্রণীত ‘টাইটেল নাইন’ বিষয়ক বিধিমালাগুলো পুনরায় চালু করা। সমালোচকদের মতে, এই নিয়মগুলি নির্যাতিতদের চেয়ে অভিযুক্তদের বেশি সুরক্ষা দেয়।

মূলত, এই নীতির ফলে যৌন হয়রানির সংজ্ঞা সংকুচিত হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিস্তৃতি ঘটেছে এবং সরাসরি শুনানির মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে।

টাইটেল নাইন (Title IX) হলো একটি ফেডারেল আইন, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রোধ করে। এই আইনের অধীনে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায়, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো মানতে হয়।

বাইডেন প্রশাসন কিছু সময়ের জন্য এই নীতিতে পরিবর্তন আনলেও, তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

২০২০ সালের নিয়মগুলি যৌন হয়রানির সংজ্ঞা সীমিত করে এবং এর প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রমাণ আরও কঠিন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ঘটনা যদি একবার ঘটে, তবে সেটি যথেষ্ট গুরুতর হলেও, ‘ব্যাপক’ (pervasive) প্রমাণ করার অভাবে অনেক সময় স্কুলের পদক্ষেপ নেওয়া বাধ্যতামূলক থাকে না।

এছাড়া, এই নিয়মগুলো স্কুলের বাইরের ঘটনা, যেমন – ছাত্রাবাস বা বিদেশে শিক্ষা সফরে হওয়া যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না।

তবে, কিছু গোষ্ঠী এই নিয়মগুলির সমর্থন করে। তাদের মতে, সরাসরি শুনানির মাধ্যমে অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষা করা যায়, যা তাদের জন্য একটি ন্যায্য প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।

এই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।

যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন হতে পারে। ঘটনার শিকার ছাত্রীরা প্রায়ই অভিযোগ জানানোর পর মানসিক এবং শিক্ষাগত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তাদের জন্য আইনি সহায়তা পাওয়াও কঠিন হতে পারে। কারণ, শুনানিতে তাদের আইনজীবীর প্রয়োজন হতে পারে, যা অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল।

এই নিয়মগুলির কারণে, অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ জানাতে দ্বিধা বোধ করে। কারণ, তাদের আশঙ্কা থাকে যে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

টাইটেল নাইন-এর এই পরিবর্তনগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের নীতি পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং সমন্বয়কারীর পদগুলোতেও পরিবর্তন এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখন একাধিক আইনের সঙ্গে পরিচিত হতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বর্তমানে, শিক্ষা দপ্তর যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার জন্য আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করেছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শিক্ষা বিভাগের তহবিল হ্রাস করার কারণে, এই অফিসগুলির কার্যক্রম কমে গেছে।

ভবিষ্যতে, ছাত্র এবং নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য সরকারগুলো তাদের নিজস্ব নীতি তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে টাইটেল নাইন-এর অধীনে থাকা ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার বাইরেও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

যৌন নির্যাতনের শিকার হলে, সাহায্য পাওয়ার জন্য বিভিন্ন হটলাইন এবং সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *