আতঙ্ক! ৭২ ঘন্টায় ইইউ’কে বাগে আনলেন ট্রাম্প, অতঃপর…

**ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: ইইউ’র উপর শুল্কের খড়গ এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব**

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ ঘোষণার হুমকি বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আকস্মিকভাবে, ইইউ-এর পণ্য আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর, পরিস্থিতি দ্রুত মোড় নেয়।

যদিও শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, তবে এর পেছনের ঘটনাপ্রবাহ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।

শুক্রবার, ট্রাম্প যখন এই সিদ্ধান্তের কথা জানান, তখন ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ছিলেন হতবাক। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদেরও অনেকে এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপে বিস্মিত হন।

এর কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়, যখন ইইউ দ্রুত আলোচনার জন্য রাজি হয়। ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে তিনি নিজেই একে একটি “ইতিবাচক ঘটনা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন যে ইইউ-এর পক্ষ থেকে আলোচনার অগ্রগতি খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে।

তাদের প্রস্তাবগুলোতে স্পষ্টতার অভাব ছিল এবং আলোচনার ফলপ্রসূ রূপরেখা তৈরি করা যাচ্ছিল না। অন্যদিকে, ইইউ কর্মকর্তাদের মতে, তাদের প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও, বাণিজ্য আলোচনার স্বাভাবিক গতি এমনই।

তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও কিছু ক্ষেত্রে আপেক্ষিক দুর্বলতা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ার আলোচনার লিখিত প্রস্তাবের অভাবকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।

ইইউ-এর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পেশ করা হলেও, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে ঘোষণা করেন যে, তিনি ১লা জুন, ২০২৫ থেকে ইইউ-এর উপর সরাসরি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছেন।

তবে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর হোয়াইট হাউস থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বাণিজ্য যুদ্ধ পুনরায় শুরুর এই হুমকি বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

পরবর্তীতে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান যে, ট্রাম্পের মতে ইইউ-এর প্রস্তাবগুলো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের তুলনায় ততটা ভালো ছিল না।

বেসেন্টের এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি সম্ভবত একটি দর কষাকষির কৌশল ছিল, যা ইইউ-কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে।

অন্যদিকে, ইইউ কর্মকর্তারা মনে করেন, এই ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইইউ-এর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব একটি বড় সমস্যা। বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ থাকার কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেটও স্বীকার করেন যে, ইইউ-এর সঙ্গে আলোচনা করা কঠিন। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে, ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

সম্ভবত এই কারণে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯ই জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দুই পক্ষকে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

ইতোমধ্যে, ইইউ কমিশনার মারোস সেফকোভিচ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পও বলেছেন যে, তিনি আলোচনা ফলপ্রসূ করতে আগ্রহী, তবে কোনো চুক্তি না হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষমতা তাঁর হাতেই থাকবে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিলতা এবং এর অনিশ্চয়তাকেই তুলে ধরে। এই ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *