ট্রাম্পের উপস্থিতি না থেকেও ভোটে আসল লড়াই!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সরাসরি ব্যালটে না থাকলেও, নভেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে তিনি যে একটি প্রধান ফ্যাক্টর, তা বলাই বাহুল্য।

সাবেক এই প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা এবং তার নীতির প্রতি সমর্থন এখনও দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিউ জার্সি এবং ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনগুলোতে উভয় দলই – রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট – ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ব্যবহার করছেন। এটিকে অনেকেই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন হিসেবে দেখছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরের বছর গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এই নির্বাচনগুলো ভোটারদের মনোভাবের একটি স্পষ্ট চিত্র দেয়, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের দল সম্পর্কে তাদের ধারণা কেমন, তা এখানে বোঝা যায়। ডেমোক্র্যাটরা তাদের সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন, তাই এই নির্বাচন তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

নিউ জার্সির রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক সিয়াটারেলি তার ডেমোক্রেট প্রতিপক্ষ, কংগ্রেস সদস্য মিকি শেরিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আজ বাড়ি ফেরার পথে যদি আপনার গাড়ির টায়ারে পাংচার হয়, তবে তিনি (শেরিল) এর জন্যেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করবেন।”

অন্যদিকে, শেরিল ট্রাম্পকে ভিন্নভাবে আক্রমণ করে ভোটারদের সমর্থন চাইছেন। তিনি বলেন, “ওই শুল্ক পরিকল্পনা? এটি একটি বিশ্বব্যাপী চাঁদাবাজির কৌশল, যা ট্রাম্প পরিবারকে বিলিয়ন ডলার বানানোর সুযোগ করে দেবে। এটি নিউ জার্সির কারও জন্য সুযোগ তৈরি করছে না।”

নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রভাব কতটুকু সফল হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে গত নির্বাচনে উভয় রাজ্যেই ট্রাম্প উল্লেখযোগ্য সমর্থন লাভ করেছিলেন। বিশেষ করে নিউ জার্সিতে তার ভোট অনেক বেড়েছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এখানে ট্রাম্প ১৬ পয়েন্টে পরাজিত হলেও, ২০২০ সালে তিনি মাত্র ৬ পয়েন্টে হেরে যান।

উভয় দলের প্রচারণায় ট্রাম্পের প্রসঙ্গ বারবার আসছে। শেরিল তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে “ট্রেন্টনের ট্রাম্প” হিসেবে উল্লেখ করছেন। অন্যদিকে, সিয়াটারেলি বলছেন, “নিউ জার্সির অবস্থা খুবই খারাপ, আর মিকি শেরিল শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা বলছেন।”

বিতর্ক মঞ্চেও ট্রাম্পের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিয়াটারেলি তাকে ‘এ+’ গ্রেড দিয়েছেন, আর শেরিল তার কঠোর সমালোচনা করে ‘এফ’ গ্রেড দিয়েছেন।

রিপাবলিকানদের জন্য, এটি একটি পরীক্ষা যে কতজন ট্রাম্প সমর্থক এমন নির্বাচনে ভোট দেবেন যেখানে ট্রাম্পের নাম নেই। এই নির্বাচনের ফলাফল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য উভয় দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে, কারণ কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ তখন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়াতে আগাম ভোট শুরু হয়ে গেছে। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাম্পের প্রতি অনেকের মধ্যে একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। তবে, ট্রাম্পের প্রভাব এখনো নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের আহ্বানের মতো বিষয়গুলো এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে।

নিউ জার্সিতে ডেমোক্রেট দলের হয়ে আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা গভর্নর ফিল মার্ফির স্থলাভিষিক্ত হতে চাইছেন শেরিল। ১৯৬১ সালের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা টানা তিনবার এখানে গভর্নরের পদ জেতেনি।

প্যাটারসনের মেয়র আন্ড্রে সায়েঘ, যিনি শেরিলের সমর্থক, বলেন, “আমরা বেশ উদ্বিগ্ন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের নির্বাচনে পাসাইক কাউন্টিতে জয়লাভ করেছেন। আমরা তাই ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত ভোটারদের সংগঠিত করতে এবং তাদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে আগ্রাসীভাবে কাজ করছি।”

পাসাইক কাউন্টিতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি, যা একটি বৃহৎ হিস্পানিক সম্প্রদায়ের আবাসস্থল, গত নির্বাচনের একটি বেদনাদায়ক চিত্র। ২০২০ সালে এই অঞ্চলে জো বাইডেন ১৬ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, সেখানে ট্রাম্প প্রায় ৩ পয়েন্টে জয়লাভ করেন।

মেয়র সায়েঘ মনে করেন, সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো তার এলাকার অনেক ভোটারকে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের পুনর্গঠিত হওয়ার এবং সম্ভবত নতুনভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফল মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *