যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় ট্রাম্প, ফল মেলেনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনাতেও। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একসময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন, ক্ষমতা ফিরে আসার পর সেই লক্ষ্যে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনার পরেও যুদ্ধবিরতি এখনো অধরা। সোমবার দুই নেতার মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ হয়, যা ছিল ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের তৃতীয় আনুষ্ঠানিক আলোচনা।
যদিও এই আলোচনা থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ লিখেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য রাজি হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আলোচনার পরেই ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং ফিনল্যান্ডের সরকার প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দ্রুত যুদ্ধবিরতি চাইছে। অন্যদিকে, রাশিয়া বলছে, আলোচনার আগে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।
রাশিয়া এই সংকটের “মূল কারণ” গুলোকে আগে গুরুত্ব দিতে চাইছে।
সোমবারের টেলিফোন আলাপে ট্রাম্প ও পুতিন উভয়ই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
পুতিন জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনাকে ফলপ্রসূ মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মনে করেন আলোচনা ভালো হয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এই আলোচনার আগে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
তবে উভয় পক্ষ বন্দী বিনিময়ে রাজি হয়েছিল।
ট্রাম্প ইউক্রেন নীতি নিয়ে তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেছেন।
বাইডেন ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক ও মানবিক সহায়তা দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন এর কিছু সাহায্য এরই মধ্যে কাটছাঁট করেছে।
ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, আলোচনার একদিন আগে রাশিয়া তাদের উপর সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যাতে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে।
মস্কো এখনো এই অভিযোগের জবাব দেয়নি।
পুতিন বলেছেন, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে তার মতামত দিয়েছেন।
পুতিন আরও বলেন, “আমরাও ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সমর্থন করি। এখন আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
রাশিয়া চাইছে ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগদানের চেষ্টা ত্যাগ করে এবং ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল তারা দখল করেছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে।
কিয়েভ এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলোকে বলেছেন, “কোনো সময়সীমা নেই এবং থাকতে পারেও না।
সবাই যত দ্রুত সম্ভব এটি করতে চাইছে, তবে বিস্তারিত এখনো অজানা।
এদিকে, মস্কো থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভা জানিয়েছেন, টেলিফোন আলাপে “বাস্তব পদক্ষেপ” নেওয়ার মতো তেমন কিছু হয়নি।
যুদ্ধ শুরুর পর ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তুরস্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
সোমবার পুতিন বলেন, ইউক্রেন সেই আলোচনা “বিফল” করে দিয়েছে।
তবে জেলেনস্কি বলেন, আলোচনার ব্যর্থতার কারণ ছিল রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে তাদের দূরপাল্লার অস্ত্র সমর্পণ, নিরপেক্ষতা ঘোষণা এবং রাশিয়ার দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ছাড়তে বলেছিল।
আলোচনা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি মনে করি, এটা খুব ভালো হয়েছে।”
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প তার রুশ প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন।
সোমবারের আলোচনা ছিল দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে তৃতীয় দীর্ঘ আলোচনা।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে তিনি কয়েকবার মস্কোয় পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক সব সময় ভালো ছিল না।
ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধ বন্ধ করতে না চাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিসও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার জন্য ভ্যাটিকানে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইতালির পক্ষ থেকে এই আলোচনাকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা