ট্রাম্পের সাবেক সহকারীর বিস্ফোরক মন্তব্য: গোপন ষড়যন্ত্রের অবসান?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক মহলে বর্তমানে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কের কারণ, একদা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর হয়ে বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তত্ত্ব প্রচারকারী কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এখন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে আসীন হয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড্যান বংগিনো, যিনি একসময় পরিচিত ছিলেন একজন জনপ্রিয় পডকাস্টার হিসেবে। বর্তমানে তিনি ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-এর (এফবিআই) ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখন তাঁদের পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। একসময় তাঁরা যে সব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রসার ঘটিয়েছিলেন, এখন তাঁরাই সেগুলোর অসারতা প্রমাণ করতে চাইছেন।

সম্প্রতি, বংগিনো’র একটি মন্তব্যের জেরে ট্রাম্প-ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তিনি সরাসরি জানান যে, কুখ্যাত ফাইনান্সার জেফরি এপস্টাইন আত্মহত্যা করেছিলেন।

এই মন্তব্যের পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ট্রাম্প সমর্থকেরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা আসলে বৃহত্তর রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি অংশ। দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের অনুসারীরা বিভিন্ন ভিত্তিহীন অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের সমর্থন জুগিয়েছেন।

বংগিনো এবং এফবিআই ডিরেক্টর কাশ প্যাটেল-এর মতো ব্যক্তিরা, একসময় এইসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন এবং সেগুলোর প্রসার ঘটিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছিল যে সরকার তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন বংগিনো ও প্যাটেলকে মারিয়া বার্টিরোমোর একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বার্টিরোমো একজন ট্রাম্প-অনুরাগী এবং তাঁর অনুষ্ঠানটি প্রায়শই ট্রাম্পের পক্ষে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে থাকে।

সেখানে তাঁরা অতীতের এফবিআই কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে, তাঁরা ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হওয়া কিছু ভিত্তিহীন ধারণাকে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন।

উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার যে গুঞ্জন উঠেছিল, সে বিষয়ে বংগিনো সরাসরি জানান, এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, “আমি কাউকে মিথ্যা কথা বলতে চাই না। সত্যিটা যা, আমি তাই বলব। আপনারা তা মানুন বা না মানুন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বংগিনো তাঁর শ্রোতাদের ভালোভাবেই চেনেন। তাঁর সমর্থকেরা সাধারণত তথ্যের চেয়ে মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেন।

তাই, বংগিনোর এই ধরনের মন্তব্য তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে গিয়ে বংগিনো তাঁর ‘আদর্শ’ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।

ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা টমি ভিয়েটর এই ঘটনাকে বেশ কৌতূহলের সঙ্গে দেখছেন। তাঁর মতে, “বংগিনো এবং প্যাটেলের মতো ব্যক্তিরা, যারা একসময় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছেন, তাঁরা এখন দায়িত্বশীল পদে এসে সত্যি কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন।”

তবে, বংগিনো এবং প্যাটেল দুজনেই তাঁদের বক্তব্যে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি আছে।

তাঁদের এই অবস্থান ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়িয়েছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *