ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে? ফেডের কঠিন পরীক্ষা!

ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ: বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্যনীতি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভকে (ফেড) একটি কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—তারা কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।

ফেডারেল রিজার্ভের ভুল মূল্যায়ন।

করোনা মহামারীর সময়, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা শুরুতে ধারণা করেছিলেন যে, মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।

ফলস্বরূপ, তারা দ্রুত সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল। অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে তারা কিছুটা পিছিয়ে ছিল।

এরপর থেকে, ফেডারেল রিজার্ভ তাদের নীতি কাঠামো পর্যালোচনা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আরও প্রস্তুত থাকতে পারে।

ট্রাম্পের নীতি ও তার প্রভাব।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে চীনের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা এখন ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এই শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর (মন্দা ও মূল্যস্ফীতি) মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত।

অর্থনীতিবিদ এমি নাকামুরার মতে, ফেডারেল রিজার্ভকে বর্তমান অর্থনৈতিক চক্রের বিশেষত্বগুলো বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি আরও নমনীয় হওয়া উচিত। তারা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের পরিবর্তে ১.৫ থেকে ২.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে ফেডারেল রিজার্ভের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, তারা ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রাই বহাল রাখবেন।

ফেডারেল রিজার্ভের ভুলগুলো।

আগের বছরগুলোতে ফেডারেল রিজার্ভ তাদের বক্তব্য এবং নীতি নির্ধারণে কিছু ভুল করেছিল। যেমন, তারা মূল্যবৃদ্ধিকে ‘অস্থায়ী’ বলেছিলেন, যা বাজারের আস্থা কমাতে সহায়ক হয়েছিল।

সাবেক ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লরেন্স মেয়ার মনে করেন, ‘অস্থায়ী’ শব্দটির পরিবর্তে ‘অ-স্থায়ী’ ব্যবহার করা উচিত ছিল।

ফেডারেল রিজার্ভের নতুন পদক্ষেপ।

ফেডারেল রিজার্ভ বর্তমানে তাদের নীতি পর্যালোচনার অংশ হিসেবে তাদের যোগাযোগের কৌশলগুলোও পর্যালোচনা করছে।

তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো— ভবিষ্যতে যাতে এমন ভুল না হয় এবং তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

এই মুহূর্তে, ফেডারেল রিজার্ভের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা কিভাবে সামাল দেওয়া যায়।

এই নীতির কারণে একদিকে যেমন মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।

বিশেষ করে, বিশ্ব বাণিজ্য এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *