যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড)-এ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব বিস্তারের একটি আলোচনা এখন বিশ্বজুড়ে। ফেডারেল রিজার্ভ হলো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা দেশটির মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সম্প্রতি, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনতে পারেন, যা সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এর সম্ভাব্য ফলাফলগুলো নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
ফেডের একজন গভর্নর লিসা কুককে তার পদ থেকে অপসারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। যদি তিনি সফল হন, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি পরিবর্তনে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হবে।
এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো সুদের হার কমানো। সম্প্রতি এক বৈঠকে তিনি এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “খুব শীঘ্রই আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করব, যা দারুণ হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সাত জন সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের দিকেই এখন ট্রাম্পের নজর। লিসা কুককে সরিয়ে দিতে পারলে, তিনি এই বোর্ডে তার পছন্দের লোক নিয়োগ করতে পারবেন।
ইতোমধ্যেই তিনি স্টিফেন মিরানকে একটি শূন্য পদে বসানোর জন্য মনোনীত করেছেন। তাছাড়া, তিনি তার আগের মেয়াদে ক্রিস্টোফার ওয়ালার এবং মিশেল বোম্যানকে ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন।
যদিও ট্রাম্প শুরুতে বর্তমান ফেডারেল রিজার্ভ প্রধান জেরোম পাওয়েলকে মনোনীত করেছিলেন, পরে তার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো থাকেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প-নিযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পন্ন একটি ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড সুদের হারের বিষয়ে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সাধারণত, প্রতি পাঁচ বছর পর আঞ্চলিক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকগুলোর প্রধানদের মেয়াদ পুনর্নবীকরণ করা হয়, যারা সুদের হার নির্ধারণের ভোটে অংশ নেন।
ফেব্রুয়ারির শেষে এই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প-মনোনীত বোর্ড আঞ্চলিক প্রধানদের প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এর ফলে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজের প্রভাব আরও বাড়তে পারে।
ফেডের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (FOMC)-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কমিটিতে ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সাত সদস্য এবং ১২টি আঞ্চলিক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রধানরা ভোট দেন।
আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো হলো—বোস্টন, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ক্লিভল্যান্ড, রিচমন্ড, আটলান্টা, শিকাগো, সেন্ট লুইস, মিনিয়াপলিস, কানসাস সিটি, ডালাস এবং সান ফ্রান্সিসকো।
তবে, ফেডারেল রিজার্ভে ট্রাম্পের অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া বেশ কঠিন হতে পারে। লিসা কুককে সরানোর আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে।
তাছাড়া, বর্তমান গভর্নরদের এই বিষয়ে সহযোগিতা করার সম্ভাবনাও কম। এমনকি, ওয়ালার এবং বোম্যানের মতো কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হতে পারে।
এই পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। সুদের হার কমানো হলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে এবং শেয়ার বাজারের উত্থান হতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদে ইতিবাচক হতে পারে।
তবে, এর দীর্ঘমেয়াদি ফলস্বরূপ মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতির পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলে।
তাই, ফেডারেল রিজার্ভের এই সম্ভাব্য পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন