মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কি হুমকির মুখে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভে (ফেড) হস্তক্ষেপের চেষ্টা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ এই স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ফেডের স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন স্বাধীনভাবে দেশের মুদ্রানীতি তৈরি করতে পারে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়তা করা সম্ভব হয়।
কিন্তু ট্রাম্পের সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা এই স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি এমন সব ব্যক্তিকে ফেডারেল রিজার্ভের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে চাইছেন, যারা সুদের হার কমানোর পক্ষে।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি ফেডারেল রিজার্ভের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা লিসা কুককে অপসারণের চেষ্টা করেন। যদিও কুকের আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, তবুও এই ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প সম্ভবত এমন সব ব্যক্তিকে ফেডের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে চান, যারা সুদের হার কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী। এর মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যবসায়িক মহল বা ওয়াল স্ট্রিটের নীরবতা অনেকের কাছেই উদ্বেগের কারণ হয়েছে। সাধারণত, এমন ঘটনা ঘটলে বাজারের অস্থিরতা দেখা যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।
অনেকে মনে করছেন, বিনিয়োগকারীরা হয়তো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, কারণ তারা মনে করছেন শেষ পর্যন্ত হয়তো কিছুই হবে না। তারা হয়তো স্বল্পমেয়াদী মুনাফার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের নীরবতা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কারণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হলে, তা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে এবং আর্থিক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির একটি অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ করে, সুদের হার এবং মুদ্রানীতির পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলে। এই কারণে, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা এবং এর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের নজরে রাখা দরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই পারে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন