যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির দিন নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য, অর্থনীতির ক্ষতি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির দিন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের একটি প্রতিচ্ছবি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, আমেরিকাতে জাতীয় ছুটির দিন অনেক বেশি, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জুনটিন্থ উপলক্ষে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি কর্মহীন ছুটির দিন রয়েছে। এই ছুটিগুলোর কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, যা দেশের অর্থনীতিকে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে।”

হোয়াইট হাউসের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ছুটির দিনটির কথা উল্লেখ করেন, তবে ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ট্রাম্প আরও যোগ করেন, “কর্মীরাও এটা চায় না! খুব শীঘ্রই আমরা দেখব, বছরের প্রত্যেক কর্মদিবসের জন্য একটি করে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। যদি আমরা আমেরিকাকে আবারও মহান করতে চাই, তাহলে এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কতটা সত্যতা রয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ছুটির দিনের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা মূলত কর্মীদের উৎপাদনশীলতার ওপর নির্ভরশীল। কর্মীর উৎপাদনশীলতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্মীদের কাজ করার ক্ষমতা।

স্বাভাবিকভাবেই, ছুটির দিনগুলোতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা শূন্যের কোঠায় থাকে। তবে, গবেষণা বলছে, শুধু ছুটির দিনই নয়, ছুটির আগের এবং পরের দিনগুলোতেও উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

কারণ, কর্মীরা ছুটির দিনের সঙ্গে মিলিয়ে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করেন, ফলে যারা ঐ সময় কাজ করেন তাদের ওপর কাজের চাপ বাড়ে এবং তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, অর্থনীতিবিদদের একটি গবেষণা অনুযায়ী, যখন কোনো সরকারি ছুটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পড়ে এবং তা কর্মদিবসে পুনর্বিন্যাস করা হয় না, তখন দেশের মোট উৎপাদন বা জিডিপি (GDP) ০.০৮% থেকে ০.২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যদি ছুটিটি পুনর্বিন্যাস করা হতো তার থেকে।

এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সরকারি ছুটির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উৎপাদন খাত।

তবে, দীর্ঘমেয়াদে, ছুটির দিন সহ বেতনসহ ছুটি কর্মীদের মনোবল বাড়ায় এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের আরও উৎপাদনশীল করে তোলে। কারণ, যারা বেশি কাজ করেন, তারা সবসময় বেশি উৎপাদনশীল হন না।

অতিরিক্ত কাজের চাপে তারা ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন।

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কর্মীরা এখন কার্যত “অন্তহীন কর্মদিবস”-এর সঙ্গে লড়াই করছেন, যেখানে স্বাভাবিক কাজের সময়ের বাইরেও মিটিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। মাইক্রোসফটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশ গত পাঁচ বছরে কাজের চাপের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

অন্যদিকে, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, কর্মীরা অতিরিক্ত ১০ ঘণ্টা ছুটি নিলে তাদের কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন ৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যারা বেশি ছুটি নেন, তাদের কোম্পানি ছাড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

অন্যদিকে, ছুটির দিনগুলোতে ভোক্তারা বেশি অর্থ খরচ করে। বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সময়ে বিভিন্ন অফার ও বিক্রয় পরিকল্পনা করে। পর্যটন, আতিথেয়তা এবং খুচরা ব্যবসার মতো খাতগুলো এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়।

যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা অনুসারে, ব্যাংক হলিডেগুলোতে ছোট দোকানগুলো গড়ে অতিরিক্ত প্রায় ২৫৩ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৩৬,০০০ টাকা) লাভ করে।

সুতরাং, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলা যায়, ছুটির দিনগুলো একদিকে যেমন কর্মীদের উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে, তেমনি তা অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *