ফেমার পরিবর্তনে ট্রাম্প, ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্তদের কান্না!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে টর্নেডোর তাণ্ডবের দুই মাস পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা এখনো ফেডারেল সহায়তা পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় টাইলারটাউন শহর।

ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো সরকারি সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন জানালেও, প্রশাসনিক জটিলতায় তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

মিসিসিপির গভর্নর টেট রিভস, যিনি রিপাবলিকান দলের সদস্য, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি বা FEMA-এর কাছে জরুরি ত্রাণ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন এখনো বিবেচনাধীন থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

টাইলারটাউনের বাসিন্দা ব্রায়ান লোয়ারি নামের এক ব্যক্তি জানান, ঝড়ে তার বাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মায়ের দেওয়া একটি টাই ক্লিপ খুঁজছেন, যা তার মায়ের বিয়ের আংটির পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, “আমি এখনো আশা হারাইনি।” তবে সরকারি সহায়তা পেতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি বেশ ক্ষুব্ধ।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, ফেডারেল সাহায্য না পাওয়ায় তারা এলাকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও পুরোদমে শুরু করতে পারছেন না। ওয়ালথাল কাউন্টির জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়স ম্যাকি জানান, ঝড়ের কারণে এলাকার ক্ষতি মেরামতের জন্য প্রায় ৭ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি টাকার বেশি) খরচ হয়েছে।

কিন্তু ফেডারেল সাহায্য ছাড়া তাদের পক্ষে আর বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়।

এদিকে, সাহায্য চেয়ে পাঠানো মিসিসিপির আবেদনটি এখনো ঝুলে থাকলেও একই সময়ে আঘাত হানা ঝড় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত আরকানসাস রাজ্যের আবেদন সম্প্রতি অনুমোদন করেছে FEMA। আরকানসাসের গভর্নর সারা হাকাবি স্যান্ডার্সও রিপাবলিকান দলের সদস্য।

মিসিসিপি রাজ্যের কর্মকর্তারা আশা করছেন, দ্রুতই তাদের আবেদনটির সুরাহা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা FEMA-এর কার্যকারিতা নিয়ে বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংস্থাটিকে “অত্যন্ত আমলাতান্ত্রিক” এবং “ধীরগতির” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

এই মন্তব্যের পর FEMA-এর কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক ডেভিড রিচার্ডসন জানিয়েছেন, রাজ্যগুলোর সঙ্গে খরচ ভাগাভাগি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ফেডারেল সহায়তা সমন্বিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মিসিসিপির এই সংকটকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ফেডারেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে মিসিসিপি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি মাইকেল গেস্ট জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রদানের জন্য তদবির করেন।

সিনেটর সিন্ডি হাইড-স্মিথও FEMA-এর নতুন নীতি এবং সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা কিংবা ভূমিকম্পের মতো ঘটনায় প্রায়ই দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা আমাদের দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।

এখানে যেমন একটি ফেডারেল সংস্থা (FEMA) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে, তেমনি বাংলাদেশেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের (MoDMR) অধীনে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *