আতঙ্কে চলচ্চিত্র জগৎ: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি ধ্বংস হবে সিনেমা?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জেরে যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্পে বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাজ্যের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। খবরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পী-কলাকুশলীরাও এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং সম্প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাণে মন্দা আসার পর এই ধরনের শুল্ক আরোপ শিল্পের জন্য “মরণ কামড়” হতে পারে। এর ফলে হাজার হাজার দক্ষ শিল্পী ও কর্মীর রুটিরুজিতে টান পড়তে পারে।

যুক্তরাজ্যে ‘বার্বি’, ‘মিশন ইম্পসিবল’ এবং ‘স্টার ওয়ার্স’-এর মতো হলিউডের বড় বড় সিনেমার শুটিং হয়। যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ হলো, তিনি মনে করেন, অন্যান্য দেশগুলো তাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষতি করছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর এবং বাণিজ্য প্রতিনিধির প্রতি শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “হলিউড ধ্বংসের পথে, অন্যান্য দেশ আমাদের সিনেমা শিল্প চুরি করেছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক আরোপ হলে তা কেবল যুক্তরাজ্যের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, বরং এর প্রভাব মার্কিন স্টুডিওগুলোর উপরও পড়বে। কারণ, যুক্তরাজ্যের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডিওগুলোরও বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অন্যদিকে, অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে চীনের একটি ভূমিকা থাকতে পারে। সম্প্রতি চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা আমদানির সংখ্যা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রতিশোধ হিসেবে ট্রাম্প এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, মিডিয়া ও ক্রীড়া বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন ক্যারোলিন ডিনেনেজ বলেছেন, “যুক্তরাজ্য ‘হলিউড অফ ইউরোপ’ হিসেবে যে পরিচিতি লাভ করেছে, ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে সেই বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর স্বার্থে, যুক্তরাজ্যে সিনেমা তৈরি করা কঠিন করে তোলা কোনোভাবেই উচিত হবে না।”

বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কারণে আলোচনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন দেখার বিষয়, দুই দেশের মধ্যে এই বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধান আসে কিনা, নাকি যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্প এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *