যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধানকে বরখাস্ত করার পর নতুন কমিশনার নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি প্রকাশিত দুর্বল কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদনের পর এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। খবর অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন কমিশনারের নাম ঘোষণা করা হবে।
মার্কিন অর্থনীতির জন্য জুলাই মাসের কর্মসংস্থান বিষয়ক তথ্য ছিল বেশ হতাশাজনক। সরকারি হিসেবে, জুলাই মাসে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। এছাড়াও, মে এবং জুন মাসের তথ্যও সংশোধন করে সম্মিলিতভাবে প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার কম দেখানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প, তথ্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, “আজকের চাকরির পরিসংখ্যান রিপাবলিকান এবং আমাকে খারাপ দেখানোর জন্য সাজানো হয়েছে।”
এরপরেই তিনি ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্সের (বিএলএস) কমিশনার এরিকা ম্যাকেন্টারফারকে বরখাস্ত করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট জানান, প্রেসিডেন্ট ‘তাঁর নিজস্ব লোক’ নিয়োগ করতে চান। যদিও হ্যাসেট এই প্রতিবেদনের ভুল প্রমাণ করতে কোনো তথ্য উপস্থাপন করেননি।
এদিকে, সাবেক শ্রম পরিসংখ্যান কমিশনার উইলিয়াম বিচ, যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনেও দায়িত্ব পালন করেছেন, সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভবিষ্যতের চাকরির রিপোর্টগুলো এখনও বিশ্বাস করবেন, তবে ট্রাম্পকে তাঁর বক্তব্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বিচ এই বরখাস্তকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেও মন্তব্য করেন, যা ব্যুরোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করে এবং ভবিষ্যতের প্রতিবেদনগুলোর ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
অন্যদিকে, সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামারস এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের এই অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বিএলএসের প্রধানের পক্ষে এই সংখ্যাগুলো ম্যানিপুলেট করা সম্ভব নয়। এটি গণতন্ত্রের কর্তৃত্ববাদের দিকে ধাবিত হওয়ার লক্ষণ।” সামারস আরও যোগ করেন, চাকরির এই প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে অর্থনীতি সম্ভবত মন্দার দিকে যাচ্ছে এবং ঝুঁকি আগের চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে, বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা এখনো চলছে, এরই মধ্যে নতুন শুল্ক কার্যকর হতে চলেছে। কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তিগুলো ‘প্রায় চূড়ান্ত’ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দ অনুযায়ী এই চুক্তিগুলো সম্পাদিত হবে। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। হ্যাসেট প্রায় আটজন প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে কাঠামোগত চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন শুল্ক ঘোষণার ফলে অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে, কারণ কিছু দেশের ওপর ৭২ শতাংশ বা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের আশঙ্কা ছিল। তবে নতুন শুল্কের প্রভাব এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েছে। ল্যারি সামারস মনে করেন, এই শুল্কগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না।
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি এখনো হয়নি। মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুই দেশের মধ্যে ৯০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও, আগস্টের ১২ তারিখের মধ্যে সেই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ার বলেছেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি আরও বিলম্বিত হতে পারে। উভয় দেশই একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন