মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাছ ধরার শিল্পে নিয়ন্ত্রণ কমানোর একটি বিতর্ক সম্প্রতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই শিল্পের নিয়মকানুন শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন মৎস্য শিল্পের উন্নতি ঘটানো।
কিন্তু এই পদক্ষেপের ভালো-মন্দ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মৎস্যজীবী মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা কঠোর বিধি-নিষেধ তাদের ব্যবসার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, এই নিয়ন্ত্রণগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে সমস্যা তৈরি করে।
তাই তারা চান, নিয়ম-কানুন সহজ করা হোক, যাতে তারা অবাধে মাছ ধরতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারেন।
অন্যদিকে, পরিবেশবিদ ও কিছু মৎস্যজীবীর আশঙ্কা, নিয়ন্ত্রণ কমালে অতিরিক্ত মাছ ধরা হতে পারে, যা সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি করবে। তারা মনে করেন, এর ফলে মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মাছ ধরার শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অতীতে অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে অনেক দেশের মৎস্য শিল্পের বিপর্যয় ঘটেছে, এমন উদাহরণও তাদের উদ্বেগের কারণ।
এই প্রেক্ষাপটে, প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মৎস্য শিল্পের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ কতটা উপযোগী? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সম্প্রতি মাছের উৎপাদন বাড়লেও, রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা এখনও বিদ্যমান। এখানেও কি সরকারি নীতি নির্ধারকদের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যা বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারে? নাকি পরিবেশের সুরক্ষাই মুখ্য হওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উচিত মাছ ধরার ক্ষেত্রে টেকসই নীতি গ্রহণ করা। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাটাও জরুরি।
অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলজ পরিবেশের ক্ষতি রোধ করতে না পারলে, ভবিষ্যতে এই শিল্প মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। একটি দেশের মৎস্য শিল্পের উন্নতি করতে হলে, একদিকে যেমন আধুনিক প্রযুক্তি ও বাজারের চাহিদা বিবেচনা করতে হবে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।
উভয় পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি উপযুক্ত নীতি তৈরি করা গেলে, বাংলাদেশের মৎস্য শিল্প আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।