যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে গৃহীত বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ অথবা সীমিত করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। আদালত জানিয়েছে, কংগ্রেস কর্তৃক বরাদ্দকৃত বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা ট্রাম্প প্রশাসনের রয়েছে।
এই রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি এবং এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে ব্যয়িতব্য বিপুল পরিমাণ অর্থ এখন ঝুঁকির মুখে।
আদালতের তিনজন বিচারপতির মধ্যে দুইজন এই সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, বৈদেশিক সাহায্য বন্ধের বিরুদ্ধে আবেদনকারী সংস্থাগুলো তাদের দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই মামলার শুনানিতে বিচারকগণ মূলত কংগ্রেসের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেননি।
২০২৪ সালের বাজেট বছরে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি সংস্থা আদালতের দ্বারস্থ হয়।
এর আগে, নিম্ন আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে বাতিল করে সাহায্য পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু আপিল আদালত নিম্ন আদালতের সেই রায়কে আংশিকভাবে বাতিল করে দেয়।
বিচারক কারেন লেক্রাফ্ট হেন্ডারসন এবং গ্রেগরি কাটসাস এই রায়ের পক্ষে মত দেন। তাঁদের মতে, আবেদনকারীদের মামলা শুনানির যোগ্য নয়।
তবে, এই রায়ের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বিচারক ফ্লোরেন্স প্যান বলেন, প্রেসিডেন্ট কোনো নীতিগত কারণে আইন অমান্য করতে পারেন না, যা সুপ্রিম কোর্টও নিশ্চিত করেছে।
তাঁর মতে, এই রায়ের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা বিচার বিভাগীয় নজরদারি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউএসএআইডি (USAID)-এর মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্পে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার এবং এইচআইভি ও এইডস বিষয়ক কর্মসূচিতে ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্প বৈদেশিক সাহায্যকে অপ্রয়োজনীয় খরচ হিসেবে বর্ণনা করে আসছিলেন এবং তাঁর বৈদেশিক নীতির সঙ্গে এটিকে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করতেন না।
উল্লেখ্য, বিচারক হেন্ডারসনকে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ এবং কাটসাসকে ট্রাম্প এবং প্যানকে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এই রায়ের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যতে এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল হয় কিনা, সেদিকে সংশ্লিষ্ট মহল গভীর দৃষ্টি রাখছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস