ইউক্রেনের সীমান্তে ট্রাম্পের আদর্শে গড়া নেতাদের দৌরাত্ম্য!

ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাড়ছে ট্রাম্প-পন্থী জাতীয়তাবাদী নেতাদের সম্ভাবনা

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে আগামী মাসেই এমন কিছু নেতার আবির্ভাব হতে পারে, যাদের রাজনৈতিক আদর্শ ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা মহান করো’ (Make America Great Again – MAGA) দর্শনের সঙ্গে মিলে যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ব্রাসেলসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও আগ্রহী।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

রোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক জর্জে সিমিয়ন বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন।

আগামী ১৮ই মে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনেও তার জয়লাভের সম্ভাবনা প্রবল। পোল্যান্ডেও একই দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে।

এখানেও কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রার্থী এবং কট্টর ডানপন্থী নেতা স্লামোমি মেনৎজেন-এর দল ভালো ফল করেছে।

যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

যদিও সিমিয়নের জয় অনেকটা নিশ্চিত, পোল্যান্ডের ডানপন্থী প্রার্থীদের জয় পাওয়াটা এখনো অনিশ্চিত।

তবে, ইউরোপ জুড়ে এখন একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এমন নেতারা ক্ষমতায় আসতে পারেন, যারা ব্রাসেলস-এর প্রতি কঠোর মনোভাবাপন্ন এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী।

পোল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল রিমেমব্রেন্স-এর প্রধান এবং সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কারোল নাওরোকি সিমিয়নের এই জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

মেনৎজেনও মজা করে জানতে চেয়েছেন যে রোমানিয়ার কর্তৃপক্ষ আবার নির্বাচন বাতিল করবে কিনা।

উল্লেখ্য, গত বছর রোমানিয়ার একটি আদালত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন প্রার্থীর প্রথম রাউন্ডের জয় বাতিল করেছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, রোমানিয়ার নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে যে দেশের জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা এখনো কমেনি, বরং তা আরও বেড়েছে।

নভেম্বরের নির্বাচনে যেখানে কট্টরপন্থী প্রার্থী ক্যালিং জর্জেস্কু ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে সিমিয়ন একাই পেয়েছেন ৪১ শতাংশ ভোট।

ব্রাসেলসের অনেকেই আশা করছেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে ইউরোপপন্থী ভোটাররা বর্তমান মেয়র নিকুসোর ডানের প্রতি সমর্থন জানাবেন, যেমনটা ফ্রান্সে সংসদীয় নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, মূল দলগুলোর মধ্যে বিভাজন থাকায় সিমিয়নের জয় প্রায় নিশ্চিত।

রোমানিয়া ও পোল্যান্ডে সংসদীয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও, প্রেসিডেন্টরা সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সামরিক ব্যয় ও পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সিমিয়ন প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন।

এমনকি, ইউক্রেন সরকার তাকে তাদের দেশে প্রবেশ করতেও নিষেধ করেছে।

তিনি নিজেকে ইউক্রেন-বিরোধী বা রাশিয়া-পন্থী হিসেবে দেখেন না, বরং ‘রোমানীয়’ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।

পোল্যান্ডের পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়।

দেশটির ক্ষমতাসীন দল ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (PiS) প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচন করতে পারছেন না।

কারোল নাওরোকি সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছেন।

অন্যদিকে, কনফেডারেশন লিবার্টি অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্স জোটের নেতা স্লামোমি মেনৎজেনও জনসমর্থন আদায় করেছেন।

নাওরোকি যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন, তার পিছনে PiS-এর সমর্থন রয়েছে।

তিনি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছেন।

ট্রাম্প নাকি তাকে বলেছেন, ‘তুমি জিতবে’।

নাওরোকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তার মিত্রদের প্রতি ‘অসদাচরণ’ করারও অভিযোগ করেছেন।

পোল্যান্ডের নির্বাচনে নাওরোকি প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট পেতে পারেন।

তবে ওয়ারশ’র বর্তমান মেয়র রাফাল ট্রাজাসকোস্কি এগিয়ে রয়েছেন, যিনি প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পেতে পারেন।

সিমিয়নের অপ্রত্যাশিত ফল পোল্যান্ডের রক্ষণশীল প্রার্থীদের জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছে।

মেনৎজেন মনে করেন, সিমিয়নের জয় প্রমাণ করে যে ‘রোমানীয়রা ইইউ-এর অভিজাতদের থেকে ভিন্ন কিছু চাইছে’।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, যদি এমন নেতারা ক্ষমতায় আসেন, তবে তা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট।

এর নীতিতে পরিবর্তন এলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *