ট্রাম্পের সমালোচক? গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দুর্বল অবস্থানে গাবার্ড!

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তুলসী গাববার্ড এখন কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরাগভাজন? সম্প্রতি এমনটাই জানা যাচ্ছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে।

বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইরান ইস্যুতে গাববার্ডের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন ট্রাম্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, গত মার্চ মাসে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে গাববার্ড বলেছিলেন, ইরান সক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ইসরায়েলের দাবির সঙ্গে যা সরাসরি সাংঘর্ষিক।

এরপর থেকেই তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে।

সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এয়ার ফোর্স ওয়ানে এক আলাপকালে ইরান প্রসঙ্গে গাববার্ডের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি বলেন, ‘আমি তার কথায় কর্ণপাত করি না।’ এরপর তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সম্ভাবনা একেবারে কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরই ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি নিয়ে তাদের মধ্যে আগে থেকেই বিভেদ ছিল।

এর ফলে, প্রশাসনের ভেতরে গাববার্ডের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

হোয়াইট হাউজের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মাস আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাববার্ডকে পছন্দ করতেন এবং তার সঙ্গ উপভোগ করতেন।

এমনকি, প্রশাসনের কেউ কেউ যখন গাববার্ডের গভীরতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন, তখনও কর্মকর্তারা বলতেন, ট্রাম্প ও তার দল গাববার্ডকে নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে জানার সুযোগ দিচ্ছেন।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। হোয়াইট হাউজের একাধিক কর্মকর্তার মতে, গাববার্ডের কার্যকারিতা নিয়ে তারা হতাশ।

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নিয়ে গাববার্ড বেশ সোচ্চার হলেও, হোয়াইট হাউজে নিজের জায়গা তৈরি করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।

এক শীর্ষ উপদেষ্টার মতে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে গাববার্ডের মন্তব্যকে এখন ‘ভুল বার্তা’ হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প।

ওই উপদেষ্টা আরও জানান, গাববার্ডের একটি ভিডিও বার্তার কারণে ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছিলেন।

যেখানে তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব পারমাণবিক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক এলিট ও যুদ্ধবাজরাই দায়ী।

ট্রাম্প মনে করেন, এই ভিডিওর মাধ্যমে গাববার্ড কার্যত ইসরায়েলকে ইরানের ওপর হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

হোয়াইট হাউজের অনেকেই মনে করেন, গাববার্ড তার সীমা লঙ্ঘন করেছেন।

তবে, হোয়াইট হাউস এবং গাববার্ড দুজনেই এই পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

গাববার্ড সাংবাদিকদের বলেছেন, ইরান ইস্যুতে তার ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে ‘একই মত’ রয়েছে।

এমনকি, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও এক বিবৃতিতে তার মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

ওডিএনআই-এর এক কর্মকর্তা ইরান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ও গাববার্ডের বক্তব্যকে ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইরান এখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না, এর মানে এই নয় যে তারা ‘খুব কাছাকাছি’ নেই, যেমনটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন।’

গাববার্ড ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে পরিচিত হলেও, হোয়াইট হাউসে তার ভূমিকা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলার সময় প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাববার্ড এখনো তার নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত নন।

এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে তার অনেক কিছুই শেখার আছে।

গাববার্ড অবশ্য তার পদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

তিনি বিভিন্ন চুক্তি থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছেন, যার মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার এসেছে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মসূচি ও পদ বিলুপ্তির মাধ্যমে।

তবে, ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, গাববার্ড আসলে গোয়েন্দা সংস্থাকে অরাজনৈতিক করার পরিবর্তে ট্রাম্পের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করছেন।

এই কারণে, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যের নিরপেক্ষতা নষ্ট করছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *