ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই বিশ্ব শাসন করতে চান, তবে এর পরিণতি কী হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যদি ক্ষমতায় আসেন, তবে বিশ্বরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে তিনি কেবল দেশ নয়, বিশ্বকে শাসন করতে চান।
তার এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, ট্রাম্পের নীতি বিশ্বকে আরও অস্থির করে তুলবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছে, ট্রাম্প সম্ভবত সেটিকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে চাইছেন। প্রথম মেয়াদে তার নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দিকে মোড় দিয়েছে।
বাণিজ্য যুদ্ধ, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার মতো পদক্ষেপগুলো এর উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি পুরনো মিত্রদের সঙ্গে দূরত্বের সৃষ্টি করেছে। তিনি এমন নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বেশি আগ্রহী, যাদের তিনি নিজের মতো ক্ষমতাধর মনে করেন।
রাশিয়া ও চীনের নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা সেই ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তার আগের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্পের সমালোচকরা মনে করেন, তার এই স্বেচ্ছাচারী মনোভাব বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তার বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
অনেকে আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান জোটগুলোকে দুর্বল করে দেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমাতে পারে।
তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত পররাষ্ট্রনীতি অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছে। তারা মনে করেন, ট্রাম্প পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন কিছু করতে চাইছেন।
চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তার কৌশল ভিন্ন হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। এর ফলে তারা হয়তো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে চাইবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের নীতির কারণে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনা করতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে চাইবে, আবার কারো মধ্যে দেখা দিতে পারে প্রতিরোধের মনোভাব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তবে ট্রাম্পের এই বিশ্ব শাসনের ধারণা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়েও নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হবে।
এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রয়োজন হবে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়া। কারণ, ট্রাম্পের বিশ্ব শাসনের ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে আমাদের ওপরও।
তথ্য সূত্র: সিএনএন