যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব: রিপাবলিকান দলের ভবিষ্যৎ সংকটে?
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টিতে (জিওপি) ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দলটির ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি, রিপাবলিকান দলের দুই প্রভাবশালী সদস্য – নর্থ ক্যারোলিনার সিনেটর থম টিলিস এবং নেব্রাস্কার কংগ্রেসম্যান ডন বেকন – তাদের পদ থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা ট্রাম্পের প্রতি দলের আনুগত্যের প্রমাণ, যা দলটির ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
জিওপি’র অভ্যন্তরে ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত অনেক রাজনীতিবিদ, যেমন – জেফ ফ্লেক, বব কোকার, লিজ চেনি এবং অ্যাডাম কিনজিঙ্গার, অতীতে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করে দল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন অথবা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। টিলিস ও বেকনের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, দলের মধ্যে ভিন্নমত পোষণকারীদের জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান চার্লি ডেন্ট মনে করেন, ট্রাম্পের অনুগত থাকার প্রবণতা দলটিকে একটি বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক পথে চালিত করছে, যেখানে আপস বা অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। ডেন্ট বলেন, “তাদের (টিলিস ও বেকন) মতো যারা কিছুটা বাস্তববাদী এবং দ্বিদলীয় সমঝোতায় বিশ্বাসী, তাদের এখন আর দলে তেমন একটা কদর নেই।”
তবে, ট্রাম্পের এই একচ্ছত্র আধিপত্য জিওপিকে কতদিন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে পারবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন রাজ্যে এবং কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে হলে, দলের প্রার্থীদের ট্রাম্পের নীতিগুলোর প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখাতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, স্বতন্ত্র ভোটারদের সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেন স্পেন বলেন, “ট্রাম্প পরবর্তী বিশ্বে, ১০০% আনুগত্যই এখন দলের প্রধান শর্ত। এখানে ভিন্ন মত বাnuance-এর কোনো সুযোগ নেই, এমনকি হাউস ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকি থাকলেও।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই কঠোর মনোভাবের কারণে দলের মধ্যে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ কমে যাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রিপাবলিকান দলের সদস্যরা প্রায়ই দলের মূল অবস্থান থেকে সরে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে, ট্রাম্পের সমর্থকরা দলের মধ্যে ভিন্নমতকে ভালোভাবে গ্রহণ করেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্রেট দলও তাদের সদস্যদের উপর আনুগত্যের চাপ সৃষ্টি করে, তবে রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চাপ অনেক বেশি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ম্যাট বেনেট বলেন, “বামপন্থী দলগুলো তাদের দলের উদারপন্থী সদস্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তবে ট্রাম্প রিপাবলিকানদের জন্য একটি ‘বিলুপ্তি-পর্যায়ের ঘটনা’।”
ট্রাম্প সম্ভবত জানেন যে, গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে নির্বাচনে জিততে হলে রিপাবলিকানদের কিছুটা নমনীয় হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, মেইন রাজ্যের সিনেটর সুসান কলিন্স, যিনি ট্রাম্পের নীতির বিরোধী, তাকে এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে আক্রমণ করেননি ট্রাম্প।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই একনিষ্ঠ আনুগত্যের দাবির কারণে রিপাবলিকান প্রার্থীরা কার্যত তার ‘ব্র্যান্ড’ নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে তারা কত আসনে জয়ী হতে পারবে? যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে রিপাবলিকানদের কিছু সাফল্য এসেছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের প্রতি অতি-আনুগত্যের কারণে দলটির জন্য হাউস এবং সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
ডেমোক্রেট দলের কৌশলবিদরা মনে করেন, রিপাবলিকানদের এই দুর্বলতা তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে। তারা বলছেন, “রিপাবলিকানরা অনেক কথা বললেও, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ও দলের নেতাদের সঙ্গেই থাকছে। আমরা যে জেলাগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, সেখানে এটি তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয় হতে পারে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রিপাবলিকানদের জন্য এই পরিস্থিতি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। তাদের মতে, যারা ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করে, তারা সম্ভবত তার সমর্থকদের মধ্যে ভোট হ্রাস করতে পারে।
বর্তমানে, সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা সহজ। তবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্রেটরা ভালো ফল করতে পারে। কারণ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসনে রিপাবলিকানরা তাদের দলের সদস্যদের রাজনৈতিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টিতে প্রভাব দলটির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ধরে রাখা এবং বিভিন্ন শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন আদায় করা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন