আতঙ্কের খবর! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কি মহাবিপদে লেকের জল?

**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট লেকসের ভবিষ্যৎ: জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে হুমকির মুখে কোটি মানুষের জীবন**

বিশ্বের বৃহত্তম স্বাদু জলের ভাণ্ডারগুলির মধ্যে অন্যতম হলো উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেকস। এই হ্রদগুলি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের প্রতীক নয়, বরং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার কয়েক কোটি মানুষের জীবন ধারণের অপরিহার্য অঙ্গ।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ জলসম্পদ এখন চরম হুমকির সম্মুখীন।

সম্প্রতি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, গ্রেট লেকস অঞ্চলের পরিবেশ গবেষণা এবং সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একটি প্রধান গবেষণাগার— গ্রেট লেকস এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (GLERL)-র কর্মপরিবেশে মারাত্মক পরিবর্তন এসেছে।

এই ল্যাবরেটরির বাজেট কমানো হয়েছে এবং কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে এখানকার পরিবেশগত গবেষণা ও জল দূষণ প্রতিরোধের কার্যক্রমে।

এর ফলে, লেকগুলোতে ক্ষতিকর শৈবাল প্রস্ফুটন (harmful algal blooms) বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং জলজ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

শৈবাল প্রস্ফুটন হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে পানিতে ক্ষতিকর শৈবালের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে পানি দূষিত হয়ে যায় এবং জলজ প্রাণীর জীবনহানি ঘটে।

এই শৈবালগুলি বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের টলেডো শহরে এরকম একটি ঘটনার কারণে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে খাবার পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছিল।

গ্রেট লেকস ল্যাবরেটরি এই ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কিন্তু বাজেট হ্রাস এবং জনবল কমানোর ফলে, এই ল্যাবরেটরির পক্ষে এখন আগের মতো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এই বছর লেকগুলোতে শৈবাল প্রস্ফুটনের ওপর নজরদারি চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এর ফলে, দূষণের মাত্রা সম্পর্কে সময় মতো সতর্ক করা সম্ভব নাও হতে পারে।

জলদূষণ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা।

এর ফলস্বরূপ, স্থানীয় সরকার এবং জনসাধারণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, একসময়ে গ্রেট লেকসের সুরক্ষার জন্য সোচ্চার হওয়া অনেক রাজনীতিবিদ এখন এই গবেষণাগারের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখাচ্ছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, যিনি একসময় গ্রেট লেকসকে “অমূল্য সম্পদ” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, বর্তমানে তিনি এমন কিছু নীতির সমর্থন করছেন যা এই লেকগুলির সুরক্ষাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই গবেষণাগারটির কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এমনকি, ভবিষ্যতে এর অনেক কাজ হয়তো অন্যান্য সংস্থাকে দিয়ে করানো হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, গ্রেট লেকসের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এবং স্থানীয় নাগরিকরা।

তারা মনে করেন, পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলি দুর্বল হয়ে গেলে, এই অঞ্চলের জলজ জীবন এবং মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই এখন জলের সংকট দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও নদীর দূষণ এবং সুপেয় জলের অভাব একটি বড় সমস্যা।

গ্রেট লেকসের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

জলসম্পদ রক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে, দূষণ রোধ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *