মার্কিন সামরিক বাহিনী গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক ব্যবস্থাপনার অধীনে আনবার কথা বিবেচনা করছে, যা ডেনমার্ক এবং আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ডেনমার্ক মনে করছে, এর ফলে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক বাড়তে পারে।
জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর গ্রিনল্যান্ডকে ইউরোপীয় কমান্ড (ইউকম) থেকে সরিয়ে নর্দার্ন কমান্ডের (নর্থকম) অধীনে নিয়ে আসার কথা ভাবছে। নর্থকম মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।
বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ডকে নর্থকমের অধীনে আনা হলে এর মাধ্যমে আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আরও সুসংহত হবে। তবে, ডেনমার্কের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এমনটা হলে গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। কারণ, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করে অঞ্চলটি দখলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে, গ্রিনল্যান্ডকে নর্থকমের অধীনে আনার পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই এমন পদক্ষেপের জন্ম হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ নিয়ে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি, এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
রাসমুসেন বলেছেন, “আমরা বন্ধুদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করি না।”
গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। একদিকে যেমন আর্কটিক অঞ্চলে সামরিক ও বাণিজ্যিক তৎপরতা বাড়ছে, তেমনিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অঞ্চলটির বরফ দ্রুত গলছে।
ফলে, এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সম্ভাবনাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে, গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক ব্যবস্থাপনার অধীনে নেয়ার মার্কিন পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান মিত্রতা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, আর্কটিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে পারে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন