মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড দখলের আগ্রহ : আর্কটিকে কি সম্পদ দখলের লড়াই শুরু?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের আগ্রহ আবারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ডেনমার্কের স্ব-শাসিত অঞ্চলটিতে সফরের প্রাক্কালে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে জল্পনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে আর্কটিক অঞ্চলে সম্পদ দখলের লড়াই আরও তীব্র হতে পারে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য গ্রিনল্যান্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ডেনমার্কসহ বিশ্বেরও গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পাওয়া উচিত। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় সরকার। তারা ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে যেতে চায় না দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষ।
এদিকে, ট্রাম্পের এই আগ্রহকে অপ্রত্যাশিত হিসেবে দেখছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আকাঙ্ক্ষা নতুন নয়, বরং এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। পুতিন মনে করেন, বিশ্বজুড়ে আর্কটিক অঞ্চলের সম্পদ দখলের যে লড়াই চলছে, তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আর্কটিক অঞ্চলের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের জন্য এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা সহজ হয়ে উঠছে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং চীনের মতো দেশগুলো এরই মধ্যে এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সংক্ষিপ্ততম পথ তৈরি করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, গ্রিনল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ রয়েছে, যা প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অপরিহার্য।
আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং নতুন সামরিক অবকাঠামো তৈরি করছে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় রাশিয়া উদ্বিগ্ন। রাশিয়া এই অঞ্চলে বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত।
অন্যদিকে, চীনেরও আর্কটিকে আগ্রহ বাড়ছে। চীন ইতিমধ্যে সেখানে গবেষণা জাহাজ পাঠিয়েছে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অভিযান পরিচালনা করছে। রাশিয়া ও চীন যৌথভাবে আর্কটিক নৌপথ তৈরি করার চেষ্টা করছে, যা বাণিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আর্কটিকে প্রভাব বিস্তারের এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যা দেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলতে থাকায় সমুদ্রের জলস্তর আরও বাড়তে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আর্কটিক অঞ্চলের গুরুত্ব বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
সব মিলিয়ে, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আর্কটিক অঞ্চলে ক্ষমতা ও সম্পদ দখলের লড়াইকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা