যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে আলিনা হাব্বার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে ফেডারেল আদালতে শুনানি চলছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী ছিলেন হাব্বা।
তার এই পদে আসীন হওয়া নিয়ে ওঠা আইনি বিতর্কের শুনানি করছেন আপিল আদালত। ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত থার্ড সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে, একটি নিম্ন আদালত রায় দেন যে, হাব্বার নিয়োগ ‘আইন ও কর্মী নিয়োগের অভিনব এক পদ্ধতির’ মাধ্যমে হয়েছে এবং তিনি নিউ জার্সির ইউএস অ্যাটর্নি (যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কৌঁসুলি)-এর পদে বহাল থাকার যোগ্য নন।
আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাব্বার জুলাই মাস থেকে নেওয়া কার্যক্রম বাতিল করা হতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ আপিল করার সুযোগ পাওয়ায়, এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি ফেডারেল আইনের অধীনে হাব্বা এই পদে বহাল থাকতে পারেন। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন তাকে প্রথম সহকারী অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।
জানা গেছে, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নেভাদাতেও। সেখানেও ফেডারেল আদালত এই পদে নিয়োগ পাওয়া এক ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
নিউ জার্সির ঘটনায়, নিম্ন আদালতের বিচারক ম্যাথিউ ব্রান এমন রায় দেওয়ার আগে, সেখানকার কয়েকজন ব্যক্তি হাব্বার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তাদের অভিযোগ ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে ১২০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, হাব্বার মামলা পরিচালনার কোনো অধিকার ছিল না।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, হাব্বা তার আইনজীবী হিসেবে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেছেন। এরপর তিনি স্বল্প সময়ের জন্য হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
মার্চ মাসে তাকে ফেডারেল প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাম্প।
নিয়োগ পাওয়ার পর, এক সাক্ষাৎকারে হাব্বা বলেছিলেন, তিনি নিউ জার্সিকে ‘লাল’ রাজ্যে পরিণত করতে চান। একজন সরকারি কৌঁসুলির এমন রাজনৈতিক মন্তব্য বিরল।
এছাড়াও, তিনি রাজ্যের ডেমোক্রেটিক গভর্নর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে তদন্তের পরিকল্পনার কথাও জানান।
পরবর্তীতে, একটি ফেডারেল ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে (আটক কেন্দ্র) প্রবেশ করায়, নিউয়ার্কের মেয়র রাস বারাকার বিরুদ্ধে একটি অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়।
যদিও পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একই ঘটনায় ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান লামনিকা ম্যাকাইভারের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনেন হাব্বা।
সাধারণত, দুর্নীতির মতো ঘটনা ছাড়া কোনো কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ বিরল। ম্যাকাইভার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
মামলাটি এখনো বিচারাধীন। জুন মাসে, যখন হাব্বার অস্থায়ী নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল, তখন তার পদে বহাল থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কারণ, নিউ জার্সির দুই ডেমোক্রেটিক সিনেটর, করি বুকার ও অ্যান্ডি কিম, তার নিয়োগের পক্ষে ছিলেন না।
নিয়ম অনুযায়ী, হাব্বার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, নিউ জার্সির ফেডারেল বিচারকরা তার জায়গায় দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন।
তবে, ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, বিচারকদের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন এবং হাব্বাকে ভারপ্রাপ্ত ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে পুনর্বহাল করেন।
বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচারকদের এই পদক্ষেপ ছিল সময়ের আগে নেওয়া এবং ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থীকে ফেডারেল আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
বিচারক ব্রানের রায় অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের নিয়োগ ফেডারেল আইনের সময়সীমা এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির নিয়মের অধীন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস