হার্ভার্ডে চীনা শিক্ষার্থীদের উপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা: যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে বাধা দেওয়ায় চীনজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এই পদক্ষেপকে একটি নতুন মোড় হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই পদক্ষেপের নিন্দা করে বলেছেন, এর ফলে “বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

চীনের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরাও বিষয়টিকে একইভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, “যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের শক্তিকে ধ্বংস করছে।

কেউ কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, “ট্রাম্প আবার এগিয়ে এসেছেন।” হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন অভিবাসন নীতি কঠোর করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) জানিয়েছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সামরিক গবেষণা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই অভিযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে বিরত থাকতে হতে পারে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক-চতুর্থাংশের বেশি। তাদের মধ্যে চীনা নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এই সিদ্ধান্তের ফলে, বিশেষ করে চীনা শিক্ষার্থীরা তাদের ভিসা নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন। তাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের পড়াশোনা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সম্পর্ককে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের বিরোধিতা করে।

তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ শুধু তাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর শিক্ষাগত সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

অতীতে চীন থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ পেতেন। কিন্তু বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতির ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে, একদিকে যেমন হার্ভার্ডের মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মেধাবী শিক্ষার্থী থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি এর প্রভাব পড়বে চীন-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও।

অনেক চীনা শিক্ষার্থী এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের ভিসা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পাশে আছে এবং তাদের পড়াশোনার সুযোগ অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে, এই পরিস্থিতির দ্রুত কোনো সমাধান না হলে, অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *