আতঙ্কের খবর! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে হারাতে বসেছে ক্যান্সার ও হৃদরোগের গবেষণার অমূল্য ডেটা!

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। কয়েক দশক ধরে চলা এই গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বায়োমেডিকেল ডেটা বা জৈবিক উপাত্তের এই বিশাল ভাণ্ডার, যা বিজ্ঞানকে নতুন দিগন্ত দেখিয়েছে, তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সংগ্রহ করা এই মূল্যবান উপাত্ত মূলত নার্স স্বাস্থ্য গবেষণা (Nurse’s Health Study) এবং স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ফলো-আপ স্টাডি (Health Professionals Follow-Up Study) থেকে এসেছে। এই গবেষণাগুলোতে কয়েক লক্ষ মানুষের ডিএনএ, রক্ত, প্রস্রাব, মল এবং টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই ডেটা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ক্যানসার, হৃদরোগ সহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ ও প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওয়াল্টার উইলেট সিএনএনকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলস্বরূপ, বিশাল আকারের ফ্রিজারগুলোতে সংরক্ষিত নমুনাগুলো সংরক্ষণে সমস্যা হবে।

এই ফ্রিজারগুলোতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে নমুনাগুলো সংরক্ষণ করা হয় এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ডেটা ভাণ্ডার বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ডেটার সাহায্যেই ট্রান্স ফ্যাট-এর ক্ষতিকর প্রভাব, অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক এবং ধূমপানের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি—এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা গেছে।

গবেষকরা এখন চেষ্টা করছেন কীভাবে এই ডেটাগুলো রক্ষা করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে ফেডারেল গ্রান্ট বা সরকারি অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তারা বিষয়টির আইনি প্রতিকার চাইছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল তহবিল (প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ডলার) থাকা সত্ত্বেও কেন ফেডারেল অনুদান গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তহবিল বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করা থাকে।

গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফেডারেল অনুদান তাদের জন্য অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডেটা শুধুমাত্র হার্ভার্ডের গবেষকদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি জাতীয় সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের গবেষকরাও তাদের গবেষণার জন্য এই ডেটা ব্যবহার করেন।

উদাহরণস্বরূপ, এই ডেটা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ জীবন এবং বার্ধক্যে সুস্থ থাকার কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

এই গবেষণা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। যদি প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া না যায়, তাহলে মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এর ফলে জনস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশেও হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে রোগ প্রতিরোধের নতুন কৌশল তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *