হার্ভার্ডের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণ: চাঞ্চল্যকর তথ্য!

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ, বিতর্কের নেপথ্যে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি এই বিতর্কের কারণ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ এবং এর প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের অভাব।

ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এমনকি ফেডারেল তহবিল বন্ধ করারও হুমকি দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কথা উল্লেখ করে এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে।

গাজায় হামাস-এর আক্রমণের পর, যখন বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়, তখন থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত। হার্ভার্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে-কে কংগ্রেসের শুনানিতে প্রশ্ন করা হয়, “ইহুদিদের গণহত্যা”র আহ্বান জানালে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করবে কিনা।

গে-র উত্তর নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং এর ফলস্বরূপ তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপরেই রক্ষণশীল বিভিন্ন গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে উদারনৈতিক শিক্ষাদর্শের অভিযোগ তোলেন।

ট্রাম্প প্রশাসন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়।

এই আদেশে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের ওপর বৈষম্য, তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এবং ভীতি প্রদর্শনের মতো অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয়। এর পরেই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

ফেব্রুয়ারি মাসে, বিচার বিভাগ একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন লিও টরেল। এই টাস্ক ফোর্স হার্ভার্ডসহ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে।

এরপর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, হার্ভার্ডসহ ৬০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ বিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।

মার্চ মাস পর্যন্ত, প্রশাসন হার্ভার্ডের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে এবং তাদের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকি দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা সরকারের এই ধরনের দাবি মানতে রাজি নয়।

তারা এটিকে তাদের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এপ্রিল মাসে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে না এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক কর্মসূচিগুলো সীমিত করতে এবং ভর্তির ক্ষেত্রে জাতিগত বিভাজন বন্ধ করারও দাবি জানায়।

তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

এই বিতর্কের ফলস্বরূপ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিভিন্ন নীতিতে পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। তারা তাদের ইক্যুইটি, ডাইভারসিটি, ইনক্লুশন অ্যান্ড বিলংগিং অফিসের নাম পরিবর্তন করে কমিউনিটি অ্যান্ড ক্যাম্পাস লাইফ রেখেছে।

এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে, এই মামলাটি আদালতে বিচারাধীন এবং এর রায় এখনো আসেনি। তবে এই বিতর্কের কারণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিতে যে প্রভাব পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। একইসঙ্গে, উচ্চশিক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *