হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব কী?
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নতুন করে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে নিষেধ করেছে দেশটির সরকার। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, যারা বর্তমানে হার্ভার্ডে পড়াশোনা করছেন, তাদের হয় অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে, অথবা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের কারণে উদ্বেগে পড়েছেন বহু শিক্ষার্থী, বিশেষ করে যারা ভবিশ্যতে হার্ভার্ডে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security) হার্ভার্ডের ‘ছাত্র এবং বিনিময় ভিজিটর প্রোগ্রাম’ (Student and Exchange Visitor Program – SEVP) -এর অনুমোদন বাতিল করার ঘোষণা করেছে।
এই প্রোগ্রামের অধীনে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পারতো। এখন এই অনুমোদন বাতিল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এর ফলে ‘এফ-১’ এবং ‘জে-১’ ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে আর এখানে ভর্তি হতে পারবে না।
উল্লেখ্য, এই ভিসাগুলো সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য দরকার হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হার্ভার্ডে সম্প্রতি ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধ নিয়ে হওয়া বিক্ষোভে কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাব ছিল। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইহুদিবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগও উঠেছে।
সরকার মনে করে, হার্ভার্ড চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ করছে। তবে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে এবং তাদের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছে।
হার্ভার্ডে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী চীন, কানাডা এবং ভারত থেকে এসেছেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে, ওই শিক্ষার্থীদের হয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে অথবা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়বে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। যদি এই ৬,৮০০ জন শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না পারেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বছরে প্রায় ৫৯১ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ২৯০ কোটি টাকা) রাজস্ব হারাতে পারে।
এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু শিক্ষা ও জীবনযাত্রার খরচ বাবদ গত বছর তারা প্রায় ৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা) অবদান রেখেছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের অধিকার সম্পর্কে অবগত করতে এবং অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ খুঁজতে সাহায্য করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি বিশেষ পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
তবে, এই ঘটনার জেরে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমে আসবে, যা বিশ্বজুড়ে শিক্ষার পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, প্রতি বছর বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং তাদের মধ্যে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে হার্ভার্ডের মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে।